অশোক গহলৌত (বাঁ দিকে) এবং সচিন পাইলট। —ফাইল চিত্র।
রাজস্থানে বিধানসভা ভোটের আগে মু্খ্যমন্ত্রীপদ নিয়ে পুরনো বিতর্ক ফের উস্কে দিলেন অশোক গহলৌত। জানালেন যে, তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাইলেও, পদ তাঁকে ছাড়তে চাইছে না। কৌশলী এই মন্তব্য করে কংগ্রেসের আর এক নেতা সচিন পাইলটকে তিনি বার্তা দিতে চাইলেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গহলৌত দিল্লিতে বলেন, “এক মহিলা আমায় বলেছিলেন যে, ভগবান চায় যে, আপনি চতুর্থ বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন। আমি তাঁকে বলি, আমি তো মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তেই চাই, কিন্তু এই পদটা আমায় ছাড়তে চায় না। মনে হয় কোনও দিনই এই পদটা আমায় ছাড়বে না।” এর পাশাপাশি কার্যত আত্মপ্রশংসা করেই তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আমার মধ্যে কিছু ছিল, যাতে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তৃতীয় বারের জন্য আমায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়েছেন।”
রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে গহলৌত-পাইলট দ্বন্দ্ব নতুন নয়। ২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতের সরকারের বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’ চালাতে গিয়ে ‘ব্যর্থ’ হয়েছিলেন পাইলট। রাজস্থানের তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তাঁর অনুগামী ১৯ জন বিধায়ককে নিয়ে দিল্লির কাছে একটি রিসর্টে গিয়ে উঠেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রত্যাশী পাইলটের এই পদক্ষেপে কংগ্রেসের অন্দরে আশঙ্কা তৈরি হয় যে, বিজেপির সহায়তায় তিনিও রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার ফেলে দিতে পারেন। তবে কিছু দিন পরেই বিদ্রোহে ইতি টানেন প্রয়াত রাজেশ পাইলটের পুত্র। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে।
এর পর গত তিন বছর ধরেই পাইলট রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাইছেন। গত অক্টোবরে ‘লক্ষ্যের’ কাছেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় ছিল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন। প্রাথমিক ভাবে সভাপতি হওয়ার দৌড়ে তখন গহলৌতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তিনি সভাপতি হলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীপদে বসতে পারেন পাইলট, এ রকমই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সে সময়ই গহলৌত অনুগামী ৮২ জন বিধায়ক বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাঁরা এআইসিসি প্রতিনিধিদের বৈঠকেও হাজির হননি। শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হাইকমান্ড সভাপতি হওয়ার দৌড় থেকে সরিয়ে দিয়েছিল গহলৌতকে। কিন্তু পাইলটের ‘ভাগ্য’ ফেরেনি। এমনকি, তাঁর দাবি সত্ত্বেও গহলৌত অনুগামী মন্ত্রী-বিধায়কদের বিরুদ্ধে দলবিরোধী পদক্ষেপের জন্য কড়া পদক্ষেপ করেনি কংগ্রেস হাইকমান্ড।
আগামী ২৫ নভেম্বর রাজস্থান বিধানসভার ২০০টি আসনেই এক দফায় ভোটগ্রহণ হবে। গণনা আগামী ৩ ডিসেম্বর মরুরাজ্যে কংগ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি ইতিমধ্যেই অধিকাংশ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। আম আদমি পার্টি, বিএসপির মতো ছোট দলগুলির প্রার্থীরাও কয়েকটি আসনে ভোটের প্রচারে নেমে পড়েছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম কংগ্রেস। সূত্রের খবর, গহলৌত এবং পাইলট গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের কারণেই প্রার্থিতালিকা প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে।