দেশের ব্যাঙ্কগুলিকে পথে বসিয়ে, সিবিআইয়ের লুক আউট নোটিস থেকে গলে গিয়ে কী ভাবে তিনি ইংল্যান্ডে পৌঁছে গেলেন, তা নিয়ে ভারতে সমালোচনা, ক্ষোভ-বিক্ষোভের অন্ত নেই। কিন্তু বিদেশে বসে বিজয় মাল্য এ বার জানিয়ে দিলেন, ভারতে তিনি ফিরতে চান। তবে এই মুহূর্তটাকে দেশে ফেরার জন্য উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন না! অবশ্য আজই হায়দরাবাদের একটি আদালত জালিয়াতির অভিযোগে মাল্য-র বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাঁকে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে হাজির করাতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে জুড়ে থাকা সংস্থা জিএমআর কিংফিশার এয়ারলাইন্সের থেকে বকেয়া প্রায় ৮ কোটি টাকা না পাওয়ার অভিযোগ এনেছিল। মাল্য ওই সংস্থাকে ৫০ লক্ষ টাকার চেক দিলে তা বাউন্স করে বলে অভিযোগ। এই মামলা চলার সময়েই জিএমআরের আইনজীবী আদালতে জানান, লুক আউট নোটিস থাকা সত্ত্বেও মাল্য দেশ ছেড়েছেন। তার পরেই আদালত জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। রবিবার বিবৃতি দিয়ে বিজয় মাল্য অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমি ভারত থেকে পালিয়ে গিয়েছি বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তাতে দুঃখিত বোধ করছি। পালিয়ে থাকার কোনও কারণ বা ইচ্ছে আমার নেই।’’ আর তাঁকে নিয়ে সংসদে হইচই, চাপানউতোর ও দেশ জুড়ে সমালোচনার মধ্যেই একটি সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজের যুক্তি হাজির করতে চেয়েছেন বিজয় মাল্য। তাঁকে দেওয়া ৯ হাজার কোটি টাকার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে ব্যাঙ্কগুলি আইনি পদক্ষেপ করছে। আর মাল্য যুক্তি দিযেছেন, ‘‘আমাকে অপরাধী বলা হচ্ছে কেন? ঋণ নিয়ে তা শোধ দিতে না পারার বিষয়টি ব্যবসা সংক্রান্ত একটি ব্যাপার। ব্যাঙ্ক যখন ঋণ দেয়, তারা জানে সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ঝুঁকি লুকিয়ে থাকে। কাকে ঋণ দেওয়া হবে সেই বিষয়টি নিয়ে ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, আমরা নই।’’ কিংফিশার কর্তার মন্তব্য, ‘‘আমাদের ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছিল। কিন্তু হঠাৎই নীচে নেমে এল সব কিছু। আমাকে এ জন্য ভিলেন বানাবেন না।’’
মাল্য দাবি করেছেন, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে তিনি ভারত ছেড়েছেন। ‘‘অনেকেই বলছেন আমি নাকি সাতটা বড় ব্যাগ নিয়ে ইংল্যান্ডে এসেছি। সংখ্যাটা ঠিক কি না, সেটা অন্য কথা। কিন্তু দু’জনের জন্য সাতটা ব্যাগ কী খুব বড় ব্যাপার? আমি তো এ ভাবেই ঘুরে বেড়াই’’— মন্তব্য বিতর্কিত ব্যবসায়ীর। তাঁর দাবি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাঁর বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে।
নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করা সাংসদ ও ব্যবসায়ী তা হলে দেশে ফিরছেন কবে? মাল্যর জবাব, ‘‘আমি মনেপ্রাণে ভারতীয়। তাই দেশে ফিরতে চাই। তবে নিশ্চিত ভাবে জানি, দেশে ফিরলে নিজের কথা বলার সুযোগ পাব না। এই সময়ে ফেরাটা ঠিক হবে না। কেননা, আমাকে অপরাধী বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ ইংল্যাল্ডে কোথায় রয়েছেন, তা-ও জানাতে চাননি মাল্য। আজ সকালেই টুইটারে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সংবাদমাধ্যম ইংল্যান্ডেও আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু লাভ নেই, আমি তাদের কথার জবাব দেব না।’’
তবে জবাব যে তাঁকে অনেক কিছু নিয়েই দিতে হবে, সেই আইনি জাল ক্রমশই এখন চেপে বসতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয় জানিয়েছেন, মাল্যর কিংফিশার এয়ারলাইন্স কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ঠিক ভাবে দিয়েছে কিনা, এ বার তা তদন্ত করে দেখা হবে।