পার্টি কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক সূচনার আগে সীতারাম ইয়েচুরি, মানিক সরকার এবং প্রকাশ কারাট। —নিজস্ব চিত্র।
সামনের বছর লোকসভা নির্বাচনে দল ক’টা আসন পাবে, ঠিক নেই! কিন্তু তার আগে গৃহযুদ্ধ চরমে উঠল সিপিএমের ২২তম পার্টি কংগ্রেসে!
দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন কী হবে, তার উপরে জোড়়া দলিল পেশ হল হায়দরাবাদে! কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনুমোদিত প্রথম খসড়়াটি আজ বিকালে পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সামনে পেশ করেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাট। আর সন্ধ্যায় তাঁর খসড়়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। একই পার্টি কংগ্রেসে একই বিষয়ের উপরে প্রাক্তন ও বর্তমান দুই সাধারণ সম্পাদক দু’টি দলিল পেশ করছেন— সিপিএমে এমন নজির মনে করতে পারছেন না অধিকাংশ প্রতিনিধি!
ইয়েচুরির লাইন কলকাতায় গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পার্টি কংগ্রেস বৃহত্তর মঞ্চ বলে সেখানে দু’টি দলিলকেই হাজির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদায়ী পলিটব্যুরো। যার মানে দাঁড়়াচ্ছে— পার্টি কংগ্রেসে এ বার দলের লাইন ঠিক করতে ভোটাভুটি প্রায় অনিবার্য!
এবং সেই সঙ্গেই আরও কৌতূহলের প্রশ্ন, সিপিএমের কি সাধারণ সম্পাদক বদলাবে? দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, বিজেপিকে রুখতে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যের প্রস্তাব পার্টি কংগ্রেসেও পরাস্ত হলে ইয়েচুরির সরে দাঁড়়ানো ছাড়়া উপায় থাকবে না। মাত্র এক বারের মেয়াদ শেষেই সে ক্ষেত্রে বিদায় নিতে হতে পারে তাঁকে! বিকল্প মুখ হিসেবে কারাটদের ভাবনায় আছেন মানিক সরকার এবং বি ভি রাঘবুলু, বৃন্দা কারাটেরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আজ সকালে উদ্বোধনী-পর্বে মানিকবাবু সভাপতিত্ব করার পরে তাঁকে পার্টি কংগ্রেসের প্রেসিডিয়ামেরও সভাপতি করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রের খবর, রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইনের দলিল পেশ করতে গিয়ে কারাট বলেই দিয়েছেন, তিনি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের মত জানাচ্ছেন! এর পরেও ভিন্ন মত আছে। সেটাও প্রতিনিধিরা জানতে পারবেন। ইয়েচুরি অবশ্য প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘আমাদের দলে বিতর্কের সুযোগ আছে। তার পরে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত মেনে চলতে হয়।’’ কিন্তু তাঁর হাতে কি সংখ্যা আছে? ইয়েচুরির পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সময়ে সংখ্যা ছিল?’’
উদ্বোধনী-পর্বে সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা দিতে এসে সিপিআইয়ের সুধাকর রেড্ডি সওয়াল করেছেন ইয়েচুরির পথে। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এবং আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য বলেছেন, সঙ্ঘ-বিজেপির ‘ফ্যাসিবাদী’ কার্যকলাপের মোকাবিলায় সবাইকে নিয়েই পথে নামতে হবে। আবার ফরওয়ার্ড ব্লকের জি শিবশঙ্কর, এসইউসি-র অসিত ভট্টাচার্যেরা কারাটের মতোই কংগ্রেসকে ভোটে অচ্ছুৎ রাখতে চান!
পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্টে কারাটেরা লিখেই দিয়েছেন, ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় পাঠাতে কংগ্রেসের সমর্থন নেওয়ার জন্য বাংলার নেতারা জেদ ধরেছিলেন! যে রিপোর্ট পেশ হবে পরশু। প্রথম দিনে বাংলার তরফে জীবেশ সরকার, শান্তনু ঝা, সোমনাথ ভট্টাচার্য ও কনীনিকা ঘোষ ব্যাট করেছেন ইয়েচুরির পক্ষেই।
শেষমেশ ইয়েচুরির গদি থাকল কি না, চূড়়ান্ত হবে লেনিনের জন্মদিনে!২২ এপ্রিল!