অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে আইআইটি-মাদ্রাজে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের অনেককেই গ্রেফতার করেছে। ছবি: টুইটার।
বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল আইআইটি-মাদ্রাজ ক্যাম্পাস। বিফ ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করায় মঙ্গলবার ক্যাম্পাসেই আক্রান্ত হয়েছিলেন পিএইচডি ছাত্র সুরজ আর। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। বুধবার সেই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হল চেন্নাইয়ের প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে। রেভলিউশনারি স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইয়ুথ ফ্রন্ট (আরএসওয়াইএফ)-সহ অন্তত চারটি সংগঠন বিক্ষোভ শুরু করেছে। হামলাকারীদের গ্রেফতারির দাবিতে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন আইআইটি-র ছাত্রদের বিরাট অংশ। কলেজ গেটের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গবাদি পশুহত্যার উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার, তার প্রতিবাদেই আইআইটি-মাদ্রাজ ক্যাম্পাসে বিফ ফেস্ট আয়োজন করেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েক জন পড়ুয়া। অম্বেডকর পেরিয়ার স্টাডি সার্কলের সঙ্গে যুক্ত ওই পড়ুয়ারা রবিবার বিফ ফেস্ট করেছিলেন। মঙ্গলবার আক্রান্ত হন সেই পার্টির অন্যতম আয়োজক সুরজ। সঙ্ঘ পরিবারের আদর্শে বিশ্বাসী কিছু পড়ুয়া এই হামলা চালান বলে অভিযোগ। সুরজকে বেধড়ক মারধর করা হয়, তাঁর একটি চোখ গুরুতর জখম হয়। জখম সুরজকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ের একটি ছবি মঙ্গলবারই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। ফলে বুধবার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
জখম সুরজকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার এই ছবিই মঙ্গলবার থেকে ঝড় তুলে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছবি: পিটিআই।
আরএসওয়াইএফ এবং থানথাই পেরিয়ার দ্রাবিড়ার কাজগম (টিপিডিকে) নামে দু’টি সংগঠন বিক্ষোভ শুরু করেছে। বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই। আইআইটি-মাদ্রাজের পড়ুয়ারা এ দিন সকালে প্রথমে ক্যাম্পাসেই জমায়েত করেন। তার পর মিছিল করে ডিন-এর অফিসের দিকে এগোন। গোলমালের আশঙ্কায় কলেজ গেটে বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। আরএসওয়াইএফ, টিপিডিকে, এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই কর্মীদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
মঙ্গলবার সুরজ যখন দুপুরের খাওয়া সারছিলেন, তখনই তাঁর উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। মারমুখী আইআইটি পড়ুয়াদের ওই দলটিকে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন সুরজের বন্ধুরাও। ফলে দু’দল পড়ুয়ার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাতে সুরজদের বিপরীত শিবিরে থাকা মণীশ কুমার সিংহ নামে এক তরুণেরও হাত ভেঙে যায় বলে খবর। তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বিফ ফেস্টের আয়োজকেরা যে রকম কোণঠাসা ছিলেন, বুধবার পরিস্থিতি মোটেই তেমন নয়। অনেক পড়ুয়াই সুরজদের সমর্থনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এগিয়ে এসেছে একাধিক ছাত্র ও যুব সংগঠন। সুরজদের উপর যাঁরা হামলা চালিয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি উঠেছে আইআইটি-মাদ্রাজে।
ইতিমধ্যে মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়ও প্রাথমিক ভাবে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপক্ষেই। গবাদি পশু হত্যায় যে নিষেধাজ্ঞা কেন্দ্র জারি করেছিল, তাতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সেই স্থগিতাদেশকে হাতিয়ার করে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়িয়েছে তামিলনাড়ুর প্রধান বিরোধী দল ডিএমকে। আইআইটি-র ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে তারা।
আরও পড়ুন: হিংসা ছড়ালে মন দিয়ে পেটাক পুলিশ, দাওয়াই মমতার
পুলিশ কী বলছে?
বুধবার সকাল থেকে আইআইটি ক্যাম্পাসে প্রচুর পুলিশ থাকলেও মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় কিন্তু পুলিশ এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি। চেন্নাইয়ের পুলিশ জানিয়েছে, আইআইটি কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইআইটি কর্তৃপক্ষের বয়ান:
আইআইটি-মাদ্রাজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। প্রতিষ্ঠানের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘দুই ছাত্রের মধ্যে গোলমাল হয়েছিল। দু’জনেই জখম হন। তাঁদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ ওই মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, কী ঘটনা ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখার জন্য আইআইটি কর্তৃপক্ষের তরফে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট আসার পর উপযুক্ত পদক্ষেপই করা হবে।
আরও পড়ুন: দিল্লি আইআইটি-র পিএইচডি ছাত্রী ক্যাম্পাসে নিজের ঘরে আত্মঘাতী
বিক্ষোভকারীরা অখুশি:
পড়ুয়াদের অনেকেই অবশ্য কর্তৃপক্ষের আচরণে খুশি নন। বুধবার যাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন, তাঁরা ডিনের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। কিন্তু ডিনের অবস্থানে তাঁরা খুশি নন। পড়ুয়াদের একাংশ জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের ঘটনার তদন্তের জন্য একটি সাধারণ কমিটি গঠিত হয়েছে। কোনও বিশেষ কমিটিও গঠিত হয়নি। ছাত্রদের কোনও দাবিই মানা হয়নি বলে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।