চিদম্বরমকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে সিবিআই। ছবি: পিটিআই
একটা সময় তাঁর অধীনেই ছিল সিবিআই-ইডি। কর্তা থেকে কনস্টেবল— সবার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন তিনি। সেই প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম-ই এখন আইএনএক্স মিডিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগে অসঙ্গতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে সিবিআই হেফাজতে। বুধবার জীবনে প্রথম বার রাত কাটালেন লক আপে। কেমন ছিল তাঁর সেই রাত? কী খেলেন? সিবিআই কর্তাদের প্রশ্নের উত্তরেই বা কী বললেন পি চিদম্বরম?
বুধবার রাতে কংগ্রেস সদর দফতরে চিদম্বরমের সাংবাদিক বৈঠকের পরেই তাঁর গ্রেফতারির আশঙ্কা জোরদার হয়। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ সিবিআই আধিকারিকরা গ্রেফতার করলেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র তথা অর্থমন্ত্রীকে। তার পরই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল দিল্লিতে সিবিআইয়ের সদর কার্যালয়ে সিজিও কমপ্লেক্স। সেখানে ১০তলার একটি সুইটে রাখা হয় চিদম্বরমকে।
সিবিআইয়ের একাধিক সূত্রে খবর, রাতে কার্যত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি তাঁকে। বরং ঘুমনোর জন্য প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। পাহারায় ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। রুটিন স্বাস্থ্যপরীক্ষাও হয়েছে তাঁর। ঘুমনোর আগে পর্যন্ত চুপচাপই ছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী— সিবিআইয়ের এক তদন্তকারী অফিসারের সূত্রে খবর এমনই।
আরও পডু়ন: আপাতত শেষ সিবিআইয়ের জেরা, আর কিছু ক্ষণ পরেই আদালতে তোলা হবে চিদম্বরমকে
সুইটে চিদম্বরম, দরজায় প্রহরী
দশ তলার যে সুইটে কংগ্রেস সাংসদকে রাখা হয়েছিল, শৌচাগার বাদ দিয়ে তার প্রায় প্রতিটি কোণ সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। সেই ক্যামেরার ছবি মনিটরিং করা হয়েছেএক তলায় সিবিআইয়ের কন্ট্রোল রুম থেকে। সুইটে তাঁর দরজার বাইরে ছিলেন দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। সিবিআই কর্তারা তাঁদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ভিতর থেকে যেন দরজা বন্ধ না করেন চিদম্বরম।
অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
ইঁদুর নেই তো?
পুরোপুরি এসি ঘর। আলো-বাতাসও পর্যাপ্ত। তবু ভয় পাচ্ছিলেন চিদম্বরম। গ্রেফতারির জন্য নয়, ইঁদুরের উৎপাতের। তাই প্রশ্নটা করেই ফেললেন, ‘ইঁদুর নেই তো?’ উত্তরে সিবিআই আধিকারিকরা জানান, ঘর পুরোপুরি স্যানিটাইজ করা। ইঁদুর-আরশোলা-টিকটিকি— এ সবের উপদ্রব নেই। তাতে নিশ্চিন্ত হন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।
চুপচাপ-উদাসীন
সিবিআই আধিকারিকদের সূত্রে খবর, গ্রেফতারির পর থেকেই কার্যত নিশ্চুপ ছিলেন চিদম্বরম। রাত পৌনে১০টা নাগাদ সিবিআই দফতরে আসার পর প্রয়োজন ছাড়া কোনও কথাই বলেননি প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যে যা প্রশ্ন করেছেন, তার উত্তর ছিল সংক্ষিপ্ত। কখনও ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-তেই কাজ সেরেছেন। কোনও ক্ষেত্রে ছিলেন এক্কেবারে ‘স্পিকটি নট’, ‘নিরুত্তর’ ‘উদাসীন’।
আরও পড়ুন: আট বছরেই ভূমিকা বদল! উদ্বোধনে ছিলেন প্রধান অতিথি, সেই সিবিআই দফতরেই আজ বন্দি চিদম্বরম!
খাবারে ‘না’
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কোনও কিছু দাঁতে কাটেননি প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। সিবিআইয়ের এক কর্তা সূত্রে খবর, রাত ১০টা নাগাদ সিবিআইয়ের ক্যান্টিন থেকে তাঁর জন্য খাবার নিয়ে সুইটে যাওয়া হয়। কিন্তু চিদম্বরম জানিয়ে দেন, তিনি কিচ্ছু খাবেন না। ফলে সিবিআই কর্মীরা খাবার ফিরিয়ে নিয়ে যান। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। তবে সিবিআই অফিসারেরা জানান, আদালত অনুমতি দিলে তাঁকে বাড়ির খাবার দেওয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা
গ্রেফতারির পর নিয়মমাফিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিদম্বরমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান সিবিআই আধিকারিকরা। রাতে তাঁর সুইটে যান চিকিৎসক। তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে খবর, তাঁর রক্তচাপ এবং রক্তে সুগার পরীক্ষা করা হয়। কোনও ওষুধ খান কিনা, চিকিৎসকেরা জিজ্ঞেস করেন। নিয়মিত কোনও ওষুধ খান না বলে জানান কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ।
জিজ্ঞাসাবাদ
চিদম্বরমকে রাতে আইএনএক্স মিডিয়ায় ‘অসঙ্গতি’ বা ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেননি সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক জানিয়েছেন,কয়েকটিপ্রশ্ন করা হয়েছিল। তাঁকে নোটিস দেওয়ার পরও কেন সিবিআইয়ে হাজিরা দেননি, দিল্লি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আর্জি খারিজের পর থেকে কংগ্রেসের সদর কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক পর্যন্ত কোথায় ছিলেন, দেশে এবং বিদেশে সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে তাঁর আয়ের উৎস কী— এই ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই চিদম্বরম ছিলেন শান্ত এবং নিরুত্তর।
তবে এর বাইরেও সুইটে তিনি আরামদায়ক বোধ করছেন কিনা, কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা, কোনও কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা— এই সব সাধারণ প্রশ্নও করেন অফিসারেরা। একই সঙ্গে তাঁরা জানিয়ে দেন, আজ বিশেষ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য তাঁকে৬ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে।
আগাম জামিনের আর্জি খারিজ হওয়ার পর থেকেই গ্রেফতারির আশঙ্কায় কার্যত যাঁর ঘুম উড়ে গিয়েছিল, এসি কামরার সুইটেও সিবিআই হেফাজতে তাঁর সেই ঘুম হয়েছে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিতে রাজি হননি সিবিআই আধিকারিকরা।