পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র সিয়াচেন হিমবাহে ভারতীয় সেনাদের সব থেকে বড় শত্রু হল প্রতিকূল আবহাওয়া। উচ্চতা ৫০০০ মিটারেরও বেশি আর তাপমাত্রা কখনও পৌঁছে যায় মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সিয়াচেন হিমবাহে অক্সিজেনের মাত্রা সমতলের প্রায় দশ শতাংশ। তাই পৌঁছনোর পরই কমতে থাকে ওজন। বমি হওয়ার পাশাপাশি খিদে থাকে না একেবারেই।
৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সিয়াচেন হিমবাহে সারা বছর উপস্থিত থাকেন ভারতীয় সেনারা। সুযোগ থাকলেও নীচে নেমে আসতে পারেন না ভারতীয় সেনারা। কারণ, তাহলেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যেরা উপরে উঠে এসে দখল নিতে পারে এই হিমবাহের। এক বার দখল নিয়ে নিলে এই হিমবাহের নিয়ন্ত্রণ ফের নিজেদের হাতে নিয়ে আসা খুবই কঠিন।
প্রতি দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় সেনাদের। জমে যায় টুথ পেস্ট। পাশাপাশি কোনও ফলই খেতে পারেন না সেনারা। কারণ, অতিরিক্ত নিম্ন তাপমাত্রায় জমে শক্ত কাঠের মতো হয়ে যায় সমস্ত ফল।
এই উচ্চতায় কোনও মানুষের বেঁচে থাকাটাই বিস্ময়ের। বিজ্ঞানের নিজস্ব নিয়মেই, পাঁচ হাজার মিটারের উপর শরীর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। এই উচ্চতায় পর্বতারোহীরা যান, কিন্তু আবহাওয়া ভাল থাকলে তবেই পাহাড়ে ওঠেন তাঁরা। কিন্তু সেনাবাহিনীকে থাকতে হয় সারা বছর।
সিয়াচেনের ঝড় বড়ই ভয়ঙ্কর। সিয়াচেনে নিয়মিত ঘন্টায় একশো মাইল বেগে ঝড় ওঠে। কখনও কখনও এই ঝড় টানা তিন সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তুষারঝড়ে এই দীর্ঘ সময় ধরে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় কোনও মানুষের বেঁচে থাকার নজির খুবই কম।
তুষার ঝড়ের সময় সেনা তাঁবুতে বসে থাকারও কোনও উপায় নেই। কারণ, তাহলে পুরো শিবিরই চলে যাবে বরফের তলায়। ঝড়ের মধ্যেই বেলচা হাতে নিয়ে বরফ সাফ করতে হয় সেনাদের। সারা বছরে সিয়াচেনে প্রায় ৩০-৪০ ফুট গভীরতার বরফ পড়ে । মাসের পর মাস স্নান না করে থাকেন ভারতীয় সেনারা। স্নান করলেই দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়া প্রায় নিশ্চিত।
অক্সিজেন কম থাকায় স্মৃতি চলে যায় অনেক সেনার। এই শিবিরে একবার থাকলে সমতলে ফিরে আসার পরও স্বাভাবিক হয় না শরীর। তাপমাত্রা অত্যন্ত কম থাকায় শরীরে থাবা বসায় তুষারক্ষত। হাত-পা-আঙুল হারানোর ঘটনার নজির খুব একটা কম নয়। বিশেষ ভাবে তৈরি দস্তানা না পরে বন্দুকের ধাতব অংশ স্পর্শ করলেও থাবা বসাতে পারে তুষারক্ষত।
ভারতীয় সেনারা ধরনের সমস্যায় পড়েন, তার পুরোদস্তুর চিকিৎসার ব্যবস্থা মেডিক্যাল সায়েন্সে নেই। কারণ, এই পরিস্থিতির মুখোমুখি অন্য কেউ হন না। জম্মু ও কাশ্মীরের হুন্তারে সেনাদের জন্য ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা বানিয়েছে বিশেষ চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র।
সিয়াচেনে ভারতীয় সেনাদের রসদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ হেলিকপ্টার বানিয়েছে ভারত। সেনাশিবিরের উপরে মাত্র ২০-৩০ সেকেন্ড থাকতে পারে এই হেলিকপ্টার। তার বেশি হলেই পাকিস্তানি গোলায় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ভারতীয় হেলিকপ্টার। তাই খাবার ও অন্যান্য রসদ এই সময়ের মধ্যেই ফেলে দিতে হয় নিচে।