হিবা নিসার
বাইরে চলছিল সংঘর্ষ। তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ির মধ্যেই বসেছিল বছর দেড়েকের হিবা নিসার। কিন্তু তাতেও ছররার আঘাত এড়াতে পারল না সে।
গত কাল গভীর রাত থেকে শোপিয়ানের বাটাগুন্দে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে বাহিনী। বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পরিস্থিতি সামলাতে পাল্টা ছররা ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে বাহিনী। হিবাকে নিয়ে দরজা-জানলা বন্ধ করে বাড়ির মধ্যেই বসেছিলেন তার বাবা নিসার আহমেদ ও মা ফ্যান্সি জান। নিসারের বক্তব্য, ‘‘কাঁদানে গ্যাসের প্রচণ্ড ধোঁয়ায় বাধ্য হয়ে বাড়ির দরজা খুলি। তখনই আমাদের লক্ষ্য করে ছররা ছোড়ে বাহিনী।’’
শ্রীনগরের হাসপাতালে বসে নিজের হাতের ক্ষত দেখালেন হিবার মা ফ্যান্সি। বললেন, ‘‘আমি কোনও মতে হাত দিয়ে মেয়েকে আড়াল করি। তাও চোখে ছররা লেগেছে হিবার।’’ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রথমে ওষুধ দিয়ে হিবার যন্ত্রণা কমানো হয়ে। বমি করছিল সে। বমি থামার পরে চোখে অস্ত্রোপচার করেন তাঁরা।
২০১৬ সালের অগস্টে কাশ্মীরে সাম্প্রতিক অশান্তির শুরু। বিক্ষোভ সামলাতে বাহিনীর ছোড়া ছররায় এ পর্যন্ত ৯ হাজার বাসিন্দা আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১১০০ জনের চোখে আঘাত লেগেছে। বিক্ষোভ সামলাতে ‘প্রাণঘাতী’ নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয় বলে দাবি বাহিনীর। কিন্তু কাশ্মীরের নাগরিক সমাজ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি, ছররাও প্রাণঘাতী। মৃত্যু না হলেও ছররায় অনেক ক্ষেত্রেই পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে দৃষ্টিশক্তি হারান অনেকে। বিতর্কের মুখে ছররার বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু এখনও উপত্যকায় ছররার ব্যবহার বন্ধ হয়নি। এ নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টে বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলাও হয়। বেঞ্চকে দেওয়া জবাবে সিআরপিএফ জানায়, উপত্যকার পরিস্থিতি এতটাই কঠিন যে বিক্ষোভ সামলাতে ছররা ছোড়া বন্ধ হলে গুলি ছুড়তে হবে। তাতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।