অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা নেডা জোটের চেয়ারম্যান হিমন্তবিশ্ব শর্মা। — ফাইল চিত্র।
মণিপুর নিয়ে সংসদে অনাস্থা এনেছে কংগ্রেস। আজ তা নিয়ে আলোচনার সময়ে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, বিজেপি এক দেশ নীতির কথা বলে। কিন্তু তাদের বিভাজন নীতির ফলে দু’টি মণিপুর তৈরি হয়েছে। একটির বাসিন্দারা রাজ্যের সমতলে থাকেন। অপরটির বাসিন্দারা থাকেন পাহাড়ে। মণিপুরে বিবদমান মেইতেই ও কুকিদের বাস যথাক্রমে সমতল ও পাহাড়ে। জবাবে সন্ধ্যায় গুয়াহাটিতে সাংবাদিক বৈঠক করে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা নেডা জোটের চেয়ারম্যান হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, কংগ্রেসের নীতির জন্য মণিপুরের ভিতরে তিনটি মণিপুর তৈরি হয়েছে। উত্তর-পূর্বে কংগ্রেসের হাতে অনেক রক্ত লেগে রয়েছে। কংগ্রেসের কোনও প্রধানমন্ত্রীই উত্তর-পূর্বের ক্ষত নিরাময়ের চেষ্টা করেননি। সে চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সংসদে গৌরব গগৈ প্রধানমন্ত্রীকে তিনটি প্রশ্ন করেছেন। প্রথম প্রশ্নে তিনি জানতে চান, এত দিন পরেও কেন প্রধানমন্ত্রী মণিপুর গেলেন না? তাঁর কথায়, ‘‘রাহুল গান্ধী, বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের নেতারা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই পর্যন্ত মণিপুর গিয়েছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কেন গেলেন না?’’
দ্বিতীয়ত, গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হওয়ার ৮০ দিন পরে কেন সংসদের বাইরে মুখ খুললেন মোদী? তাও মাত্র ৩০ সেকেন্ডের জন্য! কেন প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের মানুষের উদ্দেশে শান্তিস্থাপনের বার্তা দিলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংসদ। তাঁর তৃতীয় প্রশ্ন, গোষ্ঠী সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহকে কেন এখনও সরানো হল না।
জবাবে হিমন্তের দাবি, ‘‘তাঁদের (কংগ্রেস) মনে রাখতে হবে আগের হিংসার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা আসেনি। কিন্তু অমিত শাহ তিন দিন মণিপুরে ছিলেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘অসমের সাংসদ দাবি করেছেন, অসমের কোকরাঝাড়ে সংঘর্ষের সময়ে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অসমে এসেছিলেন। কিন্তু মনে করিয়ে দিচ্ছি, কোকরাঝাড়ে ২ বারের সংঘর্ষের মধ্যে ২০০৮ সালে ৬৪ জন মারা যান, ১১৫ জখম হন, ৩২১১ বাড়ি পোড়ে। ২০১২ সালে সংঘর্ষের সময়ে মনমোহন কোকরাঝাড়ে এসেছিলেন এক ঘণ্টার জন্য। তাতে কিছুই মেটেনি। পরে আমার ও আইবির উদ্যোগে বড়ো ও মুসলিম নেতাদের দিল্লি নিয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসানো হয়। তারপর সংঘর্ষ মেটে।’’
প্রধানমন্ত্রীর মণিপুর নিয়ে ‘মৌনব্রত’ নিয়ে হিমন্তের বক্তব্য, ‘‘অনেক সময় কথা বললে ঝামেলা বাড়ে। চুপ থেকে পরিস্থিতি সামলানোই বিচক্ষণতা। সেটাই করা হচ্ছে। মোদীজির নেতৃত্বেই সব হয়েছে। অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবে মোদীজির বক্তব্য শুনলেই সব বুঝতে পারবেন।’’ মাদক সমস্যা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে কংগ্রেস। হিমন্তের জবাব, কংগ্রেস আমলেই মাদক ব্যবসা তৈরি হয়েছে। বিজেপি তা দমনের চেষ্টা চালাচ্ছে। একদা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন হিমন্ত। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে যোগ দিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী এখন উত্তর-পূর্বে কংগ্রেসের তথাকথিত দোষের কথা বলছেন। আসলে দোষ হয়েছিল দু’টো। হিতেশ্বর শইকিয়া আত্মসমর্পণকারী আলফার সদস্য এক তরুণকে সম্মান দিয়েছিলেন। আর তরুণ গগৈ এই সুবিধেবাদীকে ক্ষমতা ও পদ দিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি কে তা নিয়ে কোনও রহস্য নেই।’’
অন্য দিকে মণিপুরে আসাম রাইফেলসের বিরুদ্ধে বরাবরই কুকিদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনছিল রাজ্য সরকার। এ বার আসাম রাইফেলসের বিরুদ্ধে এফআইআর করল রাজ্য পুলিশ। সেই সঙ্গে বিষ্ণুপুর-কাংভি রোডের সুরক্ষায় মোতায়েন আসাম রাইফেলসের বাহিনীকে সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় সিআরপি-র ১২৮ নম্বর ব্যাটেলিয়নকে মোতায়েন করার নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। ৫ অগস্ট কোয়াকতা শহরে কুকিদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ ও অন্য দুই স্থানে সংঘর্ষে মোট ৬ জনের মৃত্যুর পরে কেন্দ্র পরিস্থিতি সামলাতে ৫ কোম্পানি সিআরপি, ১ কোম্পানি এসএসবি, ১ কোম্পানি আইটিবিপি ও ৩ কোম্পানি বিএসএফ পাঠিয়েছে। কোয়াকতায় আসাম রাইফেলস মোতায়েন থাকার পরেও তিন মেইতেইকে হত্যা করেছিল কুকিরা।
পুলিশ এফআইআরে লিখেছে, কোয়াকতায় জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে বাহিনী রওনা হলেও আসাম রাইফেলস ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদের রাস্তা আটকে যেতে দেয়নি।