নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বড়সড় ধাক্কা দিয়ে দেহরাদূনের মসনদে হরীশ রাওয়াতের সরকারকে ফিরিয়ে আনল উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট। সম্ভবত এই প্রথম রাষ্ট্রপতির শাসন জারি থাকার সময়েই তা খারিজ করার সিদ্ধান্ত নিল আদালত।
উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কে এম জোসেফের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তাতে বিজেপির অস্বস্তি কমছে না। কারণ, হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে আজ
ফের ক্ষমতায় ফিরলেন হরীশ রাওয়াত। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির আগেই বিজয় বহুগুণা-সহ কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ ৯ জনের বিধায়ক পদ খারিজ করেছিলেন স্পিকার। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ওই বিধায়কেরা আদালতে যান। কিন্তু তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে কোনও অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি হাইকোর্ট। ফলে এখনও পর্যন্ত বিধায়ক পদ খারিজের সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহে কোনও পরিবর্তন না হলে এই ন’জন বিধায়ক হরীশ রাওয়াতের আস্থা ভোটেও অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ফলে পরিস্থিতির বদল না হলে সংখ্যার হিসেবে রাওয়াতের আস্থা ভোটে জেতার সম্ভাবনাই বেশি।
আদালতের রায়ের পর রাওয়াত আজ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। আজ গণতন্ত্রের জয় হল। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত, সব কিছু ভুলে এ বারে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য সব রকম সাহায্য করা।’’
কিন্তু বিজেপি এখনই রণে ভঙ্গ দিতে চাইছে না। উত্তরাখণ্ডে ছুটে গিয়ে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের দিল্লিতে নিয়ে এসেছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি আজ বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট যে ভাষায় সমালোচনা করছিল, তাতে এই রায় অপ্রত্যাশিত ছিল না। এটিকে আমরা আদৌ ধাক্কা বলব না।’’ তাঁর দাবি, ‘হরীশ রাওয়াত সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। আস্থা ভোটে বিজেপিরই জয় হবে।’’
আদালতের রায়ের পরেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বাড়িতে অরুণ জেটলি ও রাজনাথ সিংহ জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখানেই সুপ্রিম কোর্টে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিও জানান, কংগ্রেসও শীর্ষ আদালতে তাদের বক্তব্য জানাবে। তাঁর মতে, ‘‘দেশের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি থাকা অবস্থায় তা খারিজ করল আদালত।’’ সিঙ্ঘভির দাবি, নরেন্দ্র মোদী সরকার লোভী দৃষ্টি দিয়ে একের পর এক রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন করে ক্ষমতা দখল করতে চাইছে। তাদের বোঝা উচিত এ ভাবে রাজ্য হাতিয়ে নেওয়া যায় না।
আজ হাইকোর্টের রায়ের পর রাষ্ট্রপতির ভূমিকা নিয়েও বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আদালতে মোদী সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তে আদালত নাক গলাতে পারে না। কিন্তু গত কালই উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিল, রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তও আদালত খতিয়ে দেখতে পারে। রাষ্ট্রপতিও ভুল করতে পারেন। ২০০৬ সালে বিহারের রাষ্ট্রপতি শাসন খারিজ করার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে এ কথা জানিয়েছিলেন কালামের প্রাক্তন প্রচারসচিব। তবে কংগ্রেস আপাতত রাষ্ট্রপতির সমালোচনা করতে চাইছে না। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতে, ‘‘কিছু নির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া আদালত রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তও খতিয়ে দেখতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রের সুপারিশ মানার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিরও একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’’