সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের। জম্মু থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
প্রথম রাতটা তো এক রকম ভালয় ভালয় কেটে গেল। কিন্তু যত সময় বাড়ছে চিন্তার পারদও তত চড়ছে। চিন্তার প্রথমটা যদি হয় ৩৭ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ান চান্দু বাবুলাল চহ্বাণের ভবিষ্যৎ, তা হলে দ্বিতীয়টা পাকিস্তানের জঙ্গি নেতা হাফিজ সইদের ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক। পাক সেনা এবং পাক সরকারও বেশ চড়া সুরেই কথা বলেছে এ দিন।
এই মুহূর্তে নয়াদিল্লির গলায় কাঁটা পাক সেনার হাতে পাকড়াও হওয়া জওয়ান চান্দু বাবুলালের মুক্তির বিষয়টি। সেনাবাহিনীর দাবি, গত কাল ভুল করে নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে গিয়েছিলেন ২২ বছরের জওয়ান বাবুলাল। তখনই তিনি ধরা পড়েন। বাবুলালের খবর পাওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর ঠাকুমা। আজ তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানান, মহারাষ্ট্রের ওই সেনাকে ছাড়াতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক পদক্ষেপ করবে দিল্লি। ইতিমধ্যেই পাক ডিজিএমও-কে বাবুলালের বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে সেনার তরফে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র দিনেই বাবুলালের ধরা পড়া এবং এর আগে ধৃত ভারতীয় সেনাদের উপর পাক বাহিনীর নৃশংস অত্যাচারের ঘটনা— সব মিলিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। তার মধ্যেই এ দিন উরি হামলায় গুরুতর আহত আর এক সেনার মত্যু হয়েছে। এই নিয়ে উরির জঙ্গি হামলায় নিহত সেনার সংখ্যা দাঁড়াল ১৯।
ওদের কথা শুনে হাসি পাচ্ছে।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কী ভাবে করতে হয়, আমরা শেখাব ভারতকে।
হাফিজ সইদ | লস্কর নেতা
শত্রুরা যদি ভুলভাল কিছু ঘটিয়ে বসে, উপযুক্ত জবাব পাবে।
অপপ্রচার চালিয়ে পাকিস্তানকে দমানো যাবে না।
রাহিল শরিফ | পাক সেনাপ্রধান
পাকিস্তানের উপরে কাউকে কুনজর দিতে দেব না।
সেনার সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে মাতৃভূমিকে রক্ষা করব।
নওয়াজ শরিফ | পাক প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদের হুঙ্কারও। হাফিজ শুক্রবার বলেছে, ‘‘খুব দ্রুত ভারত বুঝতে পারবে, পাকিস্তানের সেনা কী ভাবে প্রতিশোধ নেয়। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কী ভাবে করতে হয়, তা আমরা ভারতকে শেখাব!’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, ভারত যে ভাবে একাধিক লঞ্চপ্যাডে হামলা চালিয়ে ৩৮ জন প্রশিক্ষিত জঙ্গিকে হত্যা করেছে, তাতে জঙ্গিদের মনোবলে বড় রকমের চিড় ধরেছে। এই অবস্থায় তাদের সাহস জোগাতেই তড়িঘড়ি হুঙ্কার ছেড়েছে হাফিজকে। যেহেতু তার সংগঠন এর আগে ভারতে একাধিক হামলা চালিয়েছে, তাই এই হুমকিকে হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না দিল্লি। সতর্কতার চাদরে গোটা দেশকে মুড়ে ফেলার প্রস্তুতি চলছে।
সেনা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বুঝতে পারছেন, সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ। নিয়ন্ত্রণরেখা এবং সীমান্তে বিক্ষিপ্ত হামলার সম্ভাবনা তো আছেই। গত দু’-তিন মাসে কাশ্মীরে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই শ’খানেক জঙ্গি ঢুকে পড়েছে। যারা এ বার নাশকতা চালাতে সক্রিয় হতে পারে। প্রথম ধাপ হিসেবে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় দেশের সব ক’টি রাজ্যে আগামী এক মাসের জন্য সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্র।
চান্দু বাবুলাল চহ্বাণ
আজ থেকে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। উৎসবের এই মরসুম শেষ হবে দীপাবলিতে। তাই গোটা মাস জুড়েই দেশের বিভিন্ন মেট্রো শহরে নাশকতার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে উৎসবের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পশ্চিমবঙ্গ, রাজধানী দিল্লি ও পাক সীমান্ত ঘেঁষা জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, গুজরাত এবং পঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলিকে। আজ সকালে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং শীর্ষ গোয়েন্দাকর্তারা। প্রতিটি রাজ্যকে বলা হয়েছে, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ভবনে
বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে রেল ও বিমানবন্দরগুলিতে। হামলার আশঙ্কায় সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোর কাজ চলেছে আজও। বিভিন্ন জায়গায় বাঙ্কার তৈরির কাজও চলছে।
আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তান যত একঘরে হয়ে পড়ছে, ততই বাড়ছে তাদের তর্জন। আজ ইসলামাবাদে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বৈঠকে মন্ত্রীদের আশ্বস্ত করে শরিফ বলেন, পাকিস্তান কোনও চোখরাঙানি বরদাস্ত করবে না। অন্য দিকে আজও ফের বদলা নেওয়ার হুঙ্কার শোনা গিয়েছে সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের গলায়। কেন্দ্রের আশঙ্কা, ইসলামাবাদ পূর্ণ শক্তিতে প্রত্যাঘাত না করলেও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র বদলা নিতে ভারতীয় সেনা ছাউনি লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে। বৃহস্পতিবারের পর আজও কাশ্মীরের আখনুর সেক্টর-সহ নিয়ন্ত্রণরেখার একাধিক জায়গায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে গুলি চালিয়েছে পাক রেঞ্জার্স বাহিনী। আর কুলগামে আধা সামরিক বাহিনীর কনভয়ে গুলি চালিয়েছে কিছু জঙ্গিও। আধা সেনা সতর্ক থাকায় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও জঙ্গিরা গা-ঢাকা দিয়েছে।
তার মধ্যেই আজ সকাল থেকে পাক সংবাদমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার শুরু হয়েছে। ভিডিওতে একাধিক ভারতীয় সেনার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। পাকিস্তানের দাবি, বুধবার রাতে হামলা চালাতে গিয়ে ওই সেনারা মারা গিয়েছে। যার প্রতিক্রিয়ায় ভারত জানিয়েছে, ওই ভিডিওটি বিকৃত। বুধবার রাতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাতে গিয়ে এক জন সেনার সামান্য চোট লেগেছে। এ ছাড়া কোনও ক্ষয়ক্ষতিই হয়নি।