১৫৫ এমএম আর্টিলারি গান এম-৭৭৭ ওজনে হালকা। আকাশপথে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া যায় যে কোনও প্রান্তে। ২৪ কিলোমিটার থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরবর্তী স্থানে ভারী গোলাবর্ষণ করতে পারে এই কামান। ছবি: সংগৃহীত।
প্রায় তিন দশক পরে ফের নতুন হাউইৎজার (কামান) এল ভারতীয় সেনার হাতে। ১৪৫টি এম-৭৭৭ হাউইৎজার কেনার জন্য আমেরিকার সঙ্গে প্রায় ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকার চুক্তি করেছিল ভারত। তার মধ্যে প্রথম দু’টি কামান চলে এল ভারতে। বৃহস্পতিবার সকালে চার্টার্ড বিমানে করে আলট্রা-লাইট হাউইৎজার দু’টি ভারতে আনা হয়েছে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য অত্যাধুনিক হাউইৎজার দু’টিকে পোখরান টেস্ট রেঞ্জে পাঠানো হচ্ছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর।
১৯৮০-র দশকে শেষ বার হাউইৎজার কিনেছিল ভারত। বফর্সের সেই কামান কেনার চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ভারতের রাজনীতি। সরকার বদলে গিয়েছিল দিল্লিতে। সেই শেষ, তার পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতীয় সেনার জন্য আর কোনও হাউইৎজার কেনেনি ভারত সরকার। অন্তত গত ১৫ বছর ধরে ভারতীয় সেনা তার আর্টিলারি বাহিনীর জন্য আধুনিক এবং কম ওজনের হাউইৎজার চাইছিল। যে সংখ্যক বফর্স কামান ভারতের হাতে রয়েছে, তাতে পাকিস্তান ও চিন সীমান্তের প্রয়োজনীয়তা একসঙ্গে মেটানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় বফর্স কামান পাঠানো খুব সহজ কাজও নয়। চিন সীমান্তের জন্য তাই বিশেষ ভাবে প্রয়োজন ছিল আধুনিক ও হালকা হাউৎজারের। সেই প্রয়োজনীয়তা এত দিনে মিটতে চলেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রথম দু’টি এম-৭৭৭ ভারতে চলে এল। পোখরান টেস্ট রেঞ্জে এই দু’টি হাউইৎজারের বিশদ পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর বাকিগুলি ভারতে আনার কাজ শুরু হবে।
বফর্স— এত দিন ভারতের হাতে এই কামান ছিল। কার্গিল যুদ্ধে এই কামানই ভারতীয় সেনার আর্টিলারি বাহিনীর মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছিল। এ বার আরও আধুনিক এবং হালকা এম-৭৭৭ হাতে আসছে। —ফাইল চিত্র।
টাইটেনিয়াম দিয়ে তৈরি হওয়ায় এম-৭৭৭ কামানগুলির ওজন ৪ টন। সহজেই এগুলিকে আকাশপথে যে কোনও এলাকায় পৌঁছে দেওয়া যায়। ফলে লাদাখে বা অরুণাচল প্রদেশে ভারত-চিন সীমান্তবর্তী এলাকায় ১৬ হাজার ফুট উচ্চতার সীমান্ত চৌকিতেও এম-৭৭৭ পাঠানো যাবে অনায়াসেই। ২৪ কিলোমিটার থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে ভারী গোলাবর্ষণে সক্ষম এই কামান।
আরও পড়ুন: বিরাট জয় পেল ভারত, কুলভূষণের ফাঁসি স্থগিত আন্তর্জাতিক আদালতে
সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, হাউইৎজারের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ। এই পর্বে কামান থেকে গোলাবর্ষণের পরীক্ষা তো হয়ই। তার সঙ্গে ফায়ারিং টেবল সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষাও জরুরি। ওই কামান থেকে বিভিন্ন ধরনের গোলাবর্ষণ করা হবে। তাই সেই অনুযায়ী স্থির হবে ফায়ারিং টেবলের বিশেষত্ব। ২০১৯-এর মার্চ থেকে নতুন কামানগুলি ভারতে আনার প্রক্রিয়া আরও গতি পাবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই সময় থেকে প্রতি মাসে ৫টি করে কামান ভারতীয় বাহিনীর হাতে আসতে শুরু করবে। প্রথম ২৫টি হাউইৎজার বিদেশ থেকেই আসবে। বাকিগুলি ভারতেই অ্যাসেম্বল করা হবে বলে জানা গিয়েছে।