ফাইল ছবি
বাঙালি হিসেবে ট্রোলের শিকার হতে হচ্ছে তাঁকে, জানালেন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। বললেন, ইদানীং কালে যখনই তিনি কোনও প্রগতিশীল চিন্তার কথা বলেন, তখনই তাঁকে আক্রমণ করা হচ্ছে বাঙালি বলেও। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর কাছে বিরক্তিকর হলেও এখনও যে বহু মানুষের কাছে বাঙালি এবং প্রগতিশীলতা অবিচ্ছেদ্য, এ কথাটা বঙ্গবাসীকে আশ্বস্ত করতে পারে।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতার কৌশিকবাবুর বিষয় ছিল অর্থনীতিতে নৈতিকতার ভূমিকা। অধ্যাপক বসু বললেন, অর্থনীতি নৈতিকতাহীন হতে পারে না। পারস্পরিক বিশ্বাস, সততা, সহনশীলতার মতো নৈতিক গুণ সমাজে না থাকলে আর্থিক উন্নতিও অসম্ভব। বক্তৃতার শুরুতেই মনে করিয়ে দিলেন, ভারতীয় অর্থব্যবস্থার গায়ে যে ধাক্কা লেগেছে, সেটা শুধু কোভিডের জন্যই নয়। অতিমারি আরম্ভ হওয়ার আগেই টানা চার বছর ধরে আর্থিক বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় কম থেকেছে। স্বাধীন ভারতে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। কেন, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধ্যাপক বসু বললেন, ভারতে সামাজিক ভাবে পরস্পরের প্রতি আস্থার পরিমাণ কম, এবং ক্রমশ তা কমছে, এটা সম্ভবত আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হওয়ার কারণ।
কোনও দেশে যদি শাসকদের মূল চালিকাশক্তি হয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু বা অন্য কোনও জনগোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা, তা হলে কি সে দেশে আদৌ সামাজিক আস্থা গড়ে ওঠা সম্ভব? কৌশিকবাবু বললেন, গোটা দুনিয়াতেই এখন এ বিষয়ে চর্চা হচ্ছে। নেতাদের বুঝতে হবে যে, দেশের সমৃদ্ধির জন্যও পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। তিনি মনে করিয়ে দিলেন, যে কোনও সমাজেই নেতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নেতা যা করেন, সমাজও বহুলাংশে অনুসরণ করে তাকেই। এবং, নেতার শুধু সদিচ্ছা থাকাটাই যথেষ্ট নয়, বৌদ্ধিক স্পষ্টতাও থাকতে হবে। তাঁর আলোচনায় বামপন্থীদের প্রসঙ্গ এল। অধ্যাপক বসু উল্লেখ করলেন পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী নেতাদের কথা। বললেন, বেশির ভাগ নেতাই ছিলেন ব্যক্তিগত ভাবে সৎ, তাঁদের উদ্দেশ্যও যথেষ্ট মহৎ ছিল। কিন্তু, ভাবনাচিন্তার অস্বচ্ছতা, এবং অহং, তাঁদের কাজের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল।
সামাজিক আস্থাহীনতা আর অবিশ্বাস থেকে উত্তরণের পথ কী তবে? অধ্যাপক বসু বললেন, একটা রাস্তা হতে পারে গোটা দুনিয়ার জন্য একটা ন্যূনতম সংবিধান, সব দেশ যা মেনে চলবে। কাউকেই তার ব্যক্তিস্বার্থ সম্পূর্ণ বিসর্জন দিতে হবে না, কিন্তু খানিকটা ভাবতে হবে অন্যদের কথা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথাও। বহুতরফা আদানপ্রদানই হতে পারে উন্নততর, ন্যায্যতর দুনিয়ার পথ।