ফাইল চিত্র।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পূর্ব লাদাখে চিন কি ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে? সরাসরি প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এবং তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই একই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে। এখনও পর্যন্ত কোনও জবাব আসেনি সরকার পক্ষের কাছ থেকে। তবে সন্ধ্যায় সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, পূর্ব লাদাখ এলাকার কিছু অংশে আড়াই কিলোমিটার পিছু হটেছে চিনা সেনা।
আজ সকালে রাহুল সরাসরি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে টুইটে প্রশ্ন করেন, “লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ড কি দখল করেছে চিন?” এর আগে কাল অমিত শাহের ‘অনুপ্রবেশ হলে শাস্তি মিলবে’ মন্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা গালিবের কবিতা উদ্ধৃত করে সনিয়া-তনয় বলেছিলেন, “সকলেই জানেন সীমা ছাড়াতে নেই। এটা মেনে চললেই তরতাজা থাকা যায়!’’ পরে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘লাদাখ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি সেনা অফিসার জানেন, বাস্তবে কী হচ্ছে।’’
সোমবার সন্ধ্যায় অমিত নিজে অবশ্য দাবি করেছিলেন, “গোটা বিশ্ব জানে, আমেরিকা ও ইজ়রায়েলের পরে যদি কোনও দেশ তার সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত রাখতে পারে, তা হলে সেটা ভারতই।’’ সেই সূত্র ধরেই আজ সকালে সোজাসুজি প্রশ্ন তোলার পথে হাঁটেন রাহুল। তৃণমূলের পক্ষ থেকেও একই কৌশল নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: একাধিক এলাকা থেকে বাহিনী ফেরাল ভারত-চিন, ফের বৈঠক বুধবার
আজ পশ্চিমবঙ্গের কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভার্চুয়াল জনসভা ছিল অমিতের। সেটি শুরু হওয়ার আগেই অভিষেক টুইট করে বলেন, ‘মাননীয় অমিত শাহজি, এই সঙ্কটের সময় বাংলা আপনাকে মুখ খুলতে দেখেনি। আশা করি, আজ এক মিনিট সময় নিয়ে জানাবেন, চিন আমাদের ভূখণ্ড দখল করেছে কি না!’ অমিতের বক্তৃতায় চিনের উল্লেখ থাকেনি। পরে অভিষেক আবার টুইট করেন, ‘‘যথারীতি অমিত শাহের বক্তব্যে শুধুই বাগাড়ম্বর। কিন্তু যেহেতু তিনি তৃণমূল সরকার বিদায়ের স্বপ্ন দেখছেন, আমি আরও এক বার তাঁর কাছে জানতে চাই, কখন চিন আমাদের ভূখণ্ড থেকে বিদায় নেবে?’’
তৃণমূলের অন্য নেতারাও এর পরে এই একই প্রশ্নে বিদ্ধ করেন অমিতকে। ডেরেক ও’ব্রায়েন দাবি তোলেন, ‘‘চিন ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে কি না, হ্যাঁ বা না-এ জবাব দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।’’ সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বলেন, “বর্তমানে ভূকৌশলগত পরিস্থিতি এতই বিপজ্জনক যে আমাদের একজোট হওয়া প্রয়োজন। তা না করে অমিত নজর ঘোরাতে চাইছেন।’’ বিরোধীদের এই প্রশ্নবাণের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সূত্র জানাচ্ছে, পূর্ব লাদাখের কিছু এলাকায় ভারত এবং চিনের সেনা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে পিছু হটতে শুরু করেছে। প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার্স এলাকা বাদে অন্যান্য জায়গায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পিছু হটেছে চিনা সেনা।
সূত্রের দাবি, একটি বড় সংখ্যক চিনা সেনা পিছু হটেছে। কিন্তু কত জন, সংখ্যাটা জানানো হয়নি। পিছিয়েছে ভারতীয় সেনাও। বুধবার দু’দেশের সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় রাউন্ডের আলোচনা হওয়ার কথা।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে যে ভাবে জাতীয় আবেগ তৈরি করা সম্ভব হয়, চিনের ক্ষেত্রে তা নয়। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অথবা সামরিক শক্তি— সব ক্ষেত্রেই অন্তত পাঁচগুণ এগিয়ে রয়েছে চিন। বাণিজ্য ক্ষেত্রেও চিনের উপর নির্ভরশীলতা ভারতের যথেষ্ট। বর্তমান সঙ্কট নিরসনে চিনের সঙ্গে নরমে গরমে চলতে হচ্ছে সাউথ ব্লককে। বিরোধী দলগুলিকেও পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। সত্য গোপনের অভিযোগ উঠছে সরকারের বিরুদ্ধেই।