Hathras Gangrape

‘খবর’ রুখতে মরিয়া উত্তরপ্রদেশের পুলিশ

কেন্দ্রের মোদী সরকারের শীর্ষ স্তর থেকেও বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে ‘সতর্ক’ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০২
Share:

প্রতিবাদ: হাথরস-কাণ্ডে ভীম আর্মির বিক্ষোভ। শুক্রবার নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে। ছবি: পিটিআই।

‘ফেক নিউজ’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এখনও পর্যন্ত ১০৫টি এফআইআর করা হয়েছে। বিভিন্ন শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৬ জনকে। হাথরসের দলিত তরুণীর ধর্ষণ নিয়ে কোনও সাংবাদিক টুইট করলেই যোগী আদিত্যনাথ সরকারের তথ্য-জনসম্পর্ক দফতরের অধিকর্তা শিশির সিংহ ‘ফেক নিউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’-র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন এ ভাবেই। তার পর সে পথে হাঁটতে শুরু করে হাথরস থানা। বলরামপুরেও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় বলরামপুর থানা থেকে একই ভাবে ‘সাবধান’ করা শুরু হয়।

Advertisement

সাবধানের মার নেই। তাই আজ যোগী সরকারের পুলিশ হাথরসের নির্যাতিতার পরিবার ও গ্রামের লোকেদের মোবাইল কেড়ে নেয়, যাতে তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে না-পারেন। শুধু যোগী সরকার নয়, কেন্দ্রের মোদী সরকারের শীর্ষ স্তর থেকেও বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে ‘সতর্ক’ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। বার্তা স্পষ্ট। হাথরসের ঘটনা নিয়ে যেন বেশি ‘বাড়াবাড়ি’ না-করা হয়!

গত কাল থেকেই গ্রামে ঢোকার রাস্তা সাংবাদিকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গ্রামের অনেক আগেই বসেছিল পুলিশের ব্যারিকেড। আজ পুলিশ সরাসরি জানিয়ে দেয়, বিশেষ তদন্তকারী দলের তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত গ্রামে সংবাদমাধ্যমের ঢোকা বারণ। হাথরসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রকাশ কুমার বলেন, ‘‘সিট-এর তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের উপরে এই বিধিনিষেধ থাকবে। বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাচাই করে বাইরের কোনও ব্যক্তি বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দাহের ৪৮ ঘণ্টা পরেও নিভে যাওয়া চিতায় পড়ে রয়েছে নির্যাতিতার অস্থি

আজ এবিপি নিউজের মহিলা সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিক হাথরসের নির্যাতিতার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাঁদের আটকায় বিশাল পুলিশবাহিনী। মহিলা পুলিশকর্মীরা ওই সাংবাদিকের সঙ্গে কার্যত ধস্তাধস্তি করেন। ক্যামেরার তার খোলার চেষ্টা হয়। ঘটনাস্থলে জেলাশাসকও চলে আসেন। কিন্তু কেন যেতে দেওয়া হবে না, সদুত্তর দেননি কেউই।

কখনও বলা হয়, ‘‘উপরওয়ালাদের বারণ আছে।’’ কখনও বলা হয়, ‘‘করোনা আছে।’’ শেষে বুম হাতে মাটিতে বসে পড়ে প্রতিবেদন রেকর্ড করেন ওই সাংবাদিক। অন্য একটি চ্যানেলের মহিলা সাংবাদিক টুইটারে ছবি দিয়ে দেখান, কী ভাবে তাঁকে ঘিরে ধরে আটকাচ্ছেন চার পুলিশ। নির্যাতিতার পরিবারের এক জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: যোগী-পুলিশের ধাক্কা ডেরেকদের, শনিবার রাজপথে প্রতিবাদে মমতা

দু’দিন আগে নির্যাতিতার দেহ পুলিশ জ্বালিয়ে দেওয়ার সময়ে তার ভিডিয়ো তুলে টুইট করেছিলেন আর একটি চ্যানেলের মহিলা সাংবাদিক। কী পুড়ছে, বারবার জানতে চেয়েও তিনি উত্তর পাননি পুলিশের কাছে। আজ একাধিক টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি কথোপকথনের বয়ান প্রকাশ করে লেখা হয়, ‘‘অডিয়ো টেপে শোনা যাচ্ছে, কী ভাবে নির্যাতিতার ভাইকে উস্কানি দিচ্ছেন ওই মহিলা সাংবাদিক।’’ বিরোধীদের বক্তব্য, নির্যাতিতার পরিবার এবং সাংবাদিকদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ তা হলে সত্যি বলেই ধরে নিতে হয়!

হাথরসের জেলাশাসক প্রবীণ কুমার লক্ষকর গত কাল নির্যাতিতার বাবাকে কার্যত হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘মিডিয়া এখানে কত দিন থাকবে! থাকব তো আমরাই।’’ নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাংবাদিকদের দেখা করার রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার পরেও পরিবারের বিবৃতি হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিয়ো বা ফোনের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যম ও বিরোধী দলের কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল। আজ টনক নড়ায় পুলিশ তাঁদের মোবাইল কেড়ে নেয়।

পুলিশের এত ‘সতর্কতা’ সত্ত্বেও নির্যাতিতার কিশোর ভাই এ দিন ঘুরপথে ধানখেতের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে চলে আসে। সে জানিয়েছে, তার মা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। বাড়ির চার দিক পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সকলের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবারের লোককে মারধর করা হয়েছে। ওই কিশোরের দাবি, পুলিশ তার জেঠার বুকে লাথি মারার পরে তিনি সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন সত্য লুকোনোর জন্য এই নৃশংসতা শুরু করেছে। আমাদের বা সংবাদমাধ্যমকে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ওঁদেরও গ্রামের বাইরে আসতে দিচ্ছে না। তার উপরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বর্বর আচরণ করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement