উত্তরপ্রদেশের বিজেপির বিধায়ক সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ। ছবি সংগৃহীত।
ধর্ষণ ব্যাপারটা মোটে ভাল কাজ না। কিন্তু সেটা শুধু প্রশাসন দিয়ে বা তলোয়ার দিয়ে ঠেকানো যাবে না। তার জন্য বাবা-মায়ের উচিত, ছোট্ট থেকে মেয়েদের ভাল সংস্কার শেখানো, ভদ্রতা শেখানো। ভাল সংস্কার আর নীতিশিক্ষাই ধর্ষণ আটকাতে পারে।
বক্তা উত্তরপ্রদেশের বিজেপির বিধায়ক সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ। হাথরস-কাণ্ড নিয়ে যখন গোটা দেশ তোলপাড়, সব মহলের চাপের মুখে যোগী সরকার, বিজেপি নেতৃত্ব মুখ লুকোতে বিষয়টি নিয়ে নীরবতা পালনই শ্রেয় মনে করেছেন, তখন অনায়াসে ধর্ষণ আটকানোর দাওয়াই দিলেন বালিয়ার বিধায়ক। তিনি যে শুধু নেতা নন, শিক্ষকও, সেটা গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করে বিজেপি বিধায়কের বক্তব্য, মেয়েদের শালীনতার শিক্ষা দিতে হবে মা-বাবাকেই। ছোট থেকে নীতিশিক্ষা দিতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ধর্ষণ রোখা যেমন সরকারের ধর্ম, তেমনই পরিবারের উপরও এই দায় বর্তায়। সরকার তো নিরাপত্তা দেবেই, কিন্তু মেয়েকে ভাল শিক্ষা দেওয়া, ছোট থেকে তার মনে নীতিবোধ ঢুকিয়ে দেওয়া পরিবারেরই কর্তব্য। সব বাবা-মায়ের উচিত, ছোট্ট থেকে মেয়েদের নীতিশিক্ষা দেওয়া, সংস্কার শেখানো।’’ পাশাপাশি, হাথরসের ঘটনায় যোগী সরকারের কোনও দোষ আছে বলেও মানতে নারাজ তিনি। দলের অন্য নেতাদের মতোই যোগীর উপরে তাঁরও ভরসা বিরাট।
সুরেন্দ্র সিংহের এমন ধরনের মন্তব্য কিন্তু নতুন নয়। গত বছরই গাঁধী হত্যাকারী গডসেকে ভারতের প্রথম সন্ত্রাসবাদী বলে মানতে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘উনি একটা ভুল করে ফেলেছিলেন!’’ তারও আগে উন্নাও গণধর্ষণ-কাণ্ডের মূল পান্ডা আর এক বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেনগারের সমর্থনে মুখ খুলে এই বিজেপি বিধায়ক জোর গলায় বলেছিলেন, ‘‘তিন সন্তানের মাকে কেউ ধর্ষণ করে নাকি? সেনগারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে।’’ যদিও তাঁর এই তত্ত্ব আদালতে ধোপে টেকেনি। ধর্ষণে অভিযুক্ত হয়েই সেনগার আপাতত জেলে। সে সময়ও সুরেন্দ্রর মন্তব্য নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হলেও যোগী আদিত্যনাথের ঘনিষ্ঠ এই বিজেপি নেতাকে দলের তরফ থেকে কিছুই বলা হয়নি। বিরোধীদের বক্তব্য, বিজেপি মনুবাদে বিশ্বাস করে বলেই তাদের নেতারা প্রকাশ্যেই এমন ধরনের কথা বলেন। খোদ যোগী আদিত্যনাথ নিজেই একাধিক বার নারী স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন। এমনকি একবার বলেছিলেন, মেয়েরা ছেলেদের মতো হয়ে উঠলে তারা রাক্ষসী হয়!
আরও পড়ুন: হাথরসে সভা ঠাকুরদের, পাশে বিজেপি
আরও পড়ুন: হাথরস স্টেশনে বসে বিবেকানন্দ, এগিয়ে এলেন স্টেশন মাস্টার...
যোগী আদিত্যনাথের জমানায় বিজেপির স্বপ্নের রামরাজ্য হয়ে ওঠার বদলে উত্তরপ্রদেশ গত কয়েক দিনে ধর্ষণপ্রদেশ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করছেন বিরোধী নেতারা। হাথরসের পর থেকে শুধু মাত্র গত ১০-১২ দিনের মধ্যে বলরামপুর, মেরঠ, অযোধ্যা, ফতেপুর, অমেঠী, বুলন্দশহর, কানপুর-সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে একের পর এক ধর্ষণ ও গণধর্ষণ ও ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছাড় পাচ্ছে না নাবালিকারাও। তার মধ্যেই বিজেপি বিধায়কের এমন মন্তব্য যে বিতর্কে আরও ঘি ঢালল, তাতে সন্দেহ নেই।