হাথরসের ঘটনায় প্রতিবাদ সারা দেশে। ছবি:পিটিআই
হাথরসের দলিত তরুণীর গণধর্ষণ, মৃত্যু এবং পরিবারকে হুমকি দিয়ে ঘরবন্দি করে, সংবাদমাধ্যমকে ঠেকিয়ে রেখে পুলিশি ঘেরাটোপে তার দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অবশেষে মুখ খুললেন বিজেপির জনা কয়েক দলিত সাংসদ। দিল্লির এক সাংসদ হংস রাজ হংস মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লিখে ‘তাড়াহুড়ো করে দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া পুলিশদের’ শাস্তির দাবি তুলেছেন। যদিও কেউই বিশেষ সুর চড়াননি। বরং যোগীর প্রশাসনের উপর ভরসা রেখেই উত্তরপ্রদেশের কৌশাম্বির বিজেপি সাংসদ বিনোদ কুমার সোনকারের মন্তব্য, ‘‘মেয়েটির পরিবারকে পাশে না নিয়ে পুলিশ অত তাড়াহুড়ো করে দেহটি জ্বালিয়ে ঠিক করেনি। এই ঘটনায় দল এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। তবে রাজ্য সরকার সব রকম ভাবে পরিবারটিকে সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’
নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরপ্রদেশেরই আর এক বিজেপি সাংসদের আবার ভয়, ‘‘বিহার ভোটে না এর খারাপ প্রভাব পড়ে!’’ সব দোষ পুলিশেরই বলে থেমে গিয়েছেন তিনি। মোহনলাজগঞ্জ, বরাবাঁকি, মিসরিখের সাংসদদের বক্তব্য মোটামুটি এক— ‘‘পুলিশই দায়ী। তা ছাড়া, দলিত ও নিম্নবর্ণের লোকেদের উপরে উচ্চবর্ণের অত্যাচার তো উত্তরপ্রদেশে নতুন না। এ সব তারই ফল। দলিতরা খুব কষ্ট পেয়েছে বটে, তবে যোগী-রাজত্বে মেয়েটির পরিবার সুবিচার পাবেই’’— আশার বাণীও শোনাচ্ছেন তাঁরা।
সুবিচার মানে? গণধর্ষিতার দেহ পুলিশি ঘেরাটোপে জ্বালিয়ে দেওয়া নিয়ে দেশজোড়া প্রবল বিক্ষোভের আবহে গত কাল বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোন করে যোগীকে নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তদন্ত চালাতে। তার পরেই কিছুটা নড়ে বসে ধর্ষিতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা, পরিবারের একজনের চাকরির মতো কিছু ঘোষণা করেছেন আদিত্যনাথ। ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ এবং প্রবল অত্যাচারে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেওয়ায় অভিযুক্ত চার উচ্চবর্ণের যুবক।
আরও পড়ুন: ভয় দেখিয়ে গ্রাম ঘিরল যোগী-প্রশাসন
পুলিশ সূত্রেই খবর, লবকুশ, রাম, রবি এবং সন্দীপ নামে ওই চার জন ঠাকুর সম্প্রদায়ের। উত্তরপ্রদেশে বিজেপিতে যাদের প্রভাব প্রবল। এই অবস্থায় দলের নেতা-সাংসদেরা যখন পুলিশের দিকে আঙুল তুলতে ব্যস্ত, তখন জানা গেল, যৌনাঙ্গে গুরুতর আঘাত থাকলেও ১৯ বছরের মেয়েটিকে ধর্ষণই করা হয়নি! এর পরে ‘সিট’ তদন্তের গতি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, যোগী রাজ্যে সরকারের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন ছাড়া যে পুলিশ কিছুই করে না, তারা কী করে একা একা যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে মৃতা তরুণীর দেহ হাসপাতাল থেকে গ্রামে এনে পরিবারকে রীতিমতো শাসিয়ে ঘরে আটকে রেখে, নিচ্ছিদ্র ঘেরাটোপে রাত আড়াইয়ের সময় দেহটি জ্বালিয়ে দিল? উঠছে আরও অনেক প্রশ্ন। কিন্তু বিজেপি নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের কাছে সে সবের একটাই উত্তর— সব দোষ ওই পুলিশের!
আরও পড়ুন: ধর্ষণই হয়নি, বলছে পুলিশ
২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল, ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা সামলে সামাজিক ও আর্থিক সব মাপকাঠির ক্ষেত্রে ‘বিমারু’ হয়ে পড়া উত্তরপ্রদেশকে ‘উত্তমপ্রদেশ’ বানাবে দল। সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে যোগী আদিত্যনাথের শাসনে ‘ধর্ষণপ্রদেশ’ হয়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম রাজ্য। যোগী-শাসিত উত্তরপ্রদেশে শুধু মাত্র গত দু’দিনে ২৫টি ধর্ষণ অথবা
গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বলরামপুরে একই ভাবে ধর্ষিতা আর এক তরুণীর মৃত্যুর আধ ঘণ্টার মধ্যে দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেই পুলিশের বিরুদ্ধেই! আর পুলিশ কী বলছে? প্রশ্ন করলে উত্তর তো দূর, ধেয়ে আসছে শাসানি— দেখছেন না তদন্ত চলছে! ‘আব চুপ হো যাইয়ে তো’!