পরিবারের হাতে না দিয়ে এ ভাবেই শেষকৃত্য করা হয় হাথরসের নির্যাতিতার। —ফাইল চিত্র
হাথরসের নিহত দলিত মহিলার পাশে দাঁড়াতে রাজনৈতিক নেতা থেকে আমজনতা, এক জোট প্রায় গোটা দেশ। এক দফায় আটকে দেওয়ার পরেও রবিবার নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেছেন রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। যাচ্ছেন ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। তৃণমূলের প্রতিনিধিদেরও আটকে দিয়েছে যোগীর পুলিশ। তার মধ্যেই উল্টো এক স্রোতও বইছে হাথরসে। অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়়াতে একজোট হওয়ার চেষ্টা করছেন উচ্চবর্ণের কিছু রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষ। অভিযুক্তদের ফাঁসানো হয়েছে-- এই দাবিতে নিজেদের মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছে বলেও সুত্রের খবর। যদিও পুলিশ-প্রশাসন ওই বৈঠকের কথা স্বীকার করেনি।
হাথরসের স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকার উচ্চবর্ণের বিজেপি নেতা রাজবীর সিংহ পেহলওয়ানের বাড়িতে শুক্রবার বৈঠকে বসেছিলেন ওই গ্রামের বেশ কিছু উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি। ওই বৈঠকে এক অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন বলে খবর। রাজবীর সিংহ বৈঠকের কথা স্বীকার করেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টির দিকে নজর রাখছেন। বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেছেন, ‘‘আমরা পুলিশকে বৈঠকের কথা জানিয়েছি। নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হওয়া উচিত। অভিযুক্তদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’’
পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য এমন কোনও বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছে। হাথরসের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট প্রেমপ্রকাশ মীনা বলেছেন, এমন কোনও বৈঠকের কথা তাঁদের জানা নেই। নির্যাতিতার পরিবারকে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্তদের পরিবার-পরিজন ও উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। সে অভিযোগ উড়িয়ে প্রেমপ্রকাশ বলেন, ‘‘মৃতার পরিবারের উপর কোনও চাপ নেই। রাজনৈতিক নেতারাও সর্বোচ্চ ৫ জন করে বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে পারেন।’’
আরও পড়ুন: হাথরস-কাণ্ডে ধর্ষণের অভিযোগ মুছতে পিআর সংস্থার দ্বারস্থ যোগী
অথচ আজ, রবিবারের আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতা বা বহিরাগত কেউ-ই গ্রামে ঢুকতে পারেননি। এমনকি, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও হাথরসের ওই গ্রামের সীমানায় ব্যারিকডের কাছে আটকে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাহুল-প্রিয়ঙ্কা-সহ কংগ্রেস নেতাদের আটকে দিয়েছিল পুলিশ। রাহুলকে গলাধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। পরের দিন শুক্রবার তৃণমূল সাংসদ-প্রাক্তন সাংসদদের প্রতিনিধিরাও গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেও আটকে পড়েন পুলিশি বাধায়। ডেরেক ও'ব্রায়েনকেও ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়ার ছবি ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। তবে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল হয়েছে। এ দিন গ্রামে ঢুকেছেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা সহ কংগ্রেস প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন: হাথরসে সিবিআই, নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে কথা রাহুল-প্রিয়ঙ্কার
গত ২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে গণধর্ষণ ও নৃশংস অত্যাচারের শিকার তরুণীর মৃত্যুর পর থেকেই গোটা দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে হাথরস। ঘটনার প্রতিবাদে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। পুলিশি ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত হতেই হাথরসে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী থকে বিভিন্ন সমাজসেবী ও নারীবাদী সংগঠনের প্রতিনিধিদের ভিড় হাথরসে। প্রত্যেকের একটাই উদ্দেশ্য, নির্যাতিতার পরিবারের পাশে থাকার বার্তা ও ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেওয়া। তার মধ্যে অভিযুক্তদের পক্ষেও উচ্চবর্ণের কিছু মানুষ সরব হওয়ায় ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।