প্রতীকী ছবি।
হাঁটুর নীচে থেকে দু’টি পা-ই অসাড়। হরিয়ানার এমনই এক যুবক আট বছর ধরে কলকাতায় ঘাঁটি গেড়ে বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে টাকা আত্মসাতের দুষ্টচক্র চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। প্রতারণা, অপহরণ এবং আটকে রেখে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগে রাজারহাট থেকে ওই প্রতিবন্ধী যুবককে শনিবার গ্রেফতার করেছে বারাণসীর স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ।
সেখানে পবনকুমার গাঁধী নামে ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে বারাসত আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃতকে পাঁচ দিনের ট্রানজ়িট রিমান্ডে বারাণসী নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। এ দিনই তাকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশ রওনা হন তদন্তকারীরা।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে প্রথমে তপসিয়ায় এবং পরে নিউ টাউন রাজারহাটে থাকত পবন। সে আট বছর ধরে কলকাতায় গা-ঢাকা দিয়ে দুষ্টচক্র চালাচ্ছিল। ওই ঘটনায় এ-পর্যন্ত মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পবনই ওই চক্রের মাথা। মূলত কলকাতায় বসেই সে পুরো অপহরণ এবং তোলাবাজির চক্র চালাত।
তদন্তকারীরা জানান, ডিসেম্বরে আমেদাবাদের এক যুবক বারাণসীর ক্যান্ট থানায় অভিযোগ করেন, নভেম্বরে তাঁর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ব্যক্তির আলাপ হয়। সেই লোকটি তাঁকে কানাডায় চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই জন্য তাঁর কাছে টাকা চায় সে। তিনি রাজি হওয়ায় কলকাতায় থাকা চক্রের লোকজন তাঁকে বারাণসী যেতে বলে। তিনি সেখানে গেলে প্রথমে তাঁকে রাখা হয় বারাণসীর ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশনের কাছে। পরে অভিযুক্তেরা তাঁকে নিয়ে যায় অন্য আস্তানায়। তদন্তকারীরা জানান, তার পরেই ওই যুবকের পরিবারের কাছে ফোন করে ২০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। হাওয়ালার মাধ্যমে সেই টাকা মেটানোর পরে ট্রেনের টিকিট হাতে দিয়ে ওই যুবককে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই আটকে রেখে বা অপহরণ করে টাকা আদায় করা হত বলে জানায় পুলিশ। আমেদাবাদের যুবকের অভিযোগের তদন্তে নেমে ফেব্রুয়ারিতে রাজবীর সিংহ যাদব নামে বারাণসীর এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জেরায় ধৃতেরা চক্রের পান্ডা পবনের নাম জানায়।
পুলিশ জানায়, পবন নিয়মিত মোবাইলের সিম পাল্টে ফেলত। সেই সঙ্গে বদল করত আস্তানা। কলকাতায় বসেই বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে সে বাংলাদেশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার যুবকদের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করত। তাঁরা রাজি হলে পবনের সঙ্কেত পেয়ে আসরে নামত রাজবীর এবং অন্যেরা। মূলত বোর্ডিং পাশ এবং অগ্রিম টাকা দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠিয়ে বিভিন্ন কর্মপ্রার্থীকে আটকে রেখে মোটা টাকা আদায় করত তারা। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, প্রতিটি ঘটনায় আড়াই-তিন লক্ষ টাকা পেত পবন।
এসটিএফের ইনস্পেক্টর অনিল সিংহ জানান, জেরায় পবনের নাম বলে রাজবীরই। পবনের কাছে টাকা কী ভাবে পৌঁছে দেওয়া হত, তা দেখা হচ্ছে। চক্রটি এখনও পর্যন্ত ৩০ জনের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে।