মদ ছাড়ায় না ডান্ডা, ভোটে গুলাবি গ্যাং

মাধুরী-জুহি অভিনীত ছবিটিকে সুযোগ পেলেই তুলোধনা করেন তিনি। অভিযোগ, ইচ্ছেমতো মশলা ঢেলে রুপোলি পর্দায় দেখানো হয়েছে তাঁর জীবন। তাঁর সঙ্গে কথাই বলা হয়নি।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৭
Share:

গ্যাংয়ের নেত্রী সম্পত পাল (ডান দিকে) ফাইল চিত্র

মাধুরী-জুহি অভিনীত ছবিটিকে সুযোগ পেলেই তুলোধনা করেন তিনি। অভিযোগ, ইচ্ছেমতো মশলা ঢেলে রুপোলি পর্দায় দেখানো হয়েছে তাঁর জীবন। তাঁর সঙ্গে কথাই বলা হয়নি। বুন্দেলখণ্ডের লোক কিন্তু বলতে ছাড়ছেন না, ‘গুলাবি গ্যাং’ এর জন্মদাত্রী সম্পত পালের জীবনটাই বদলে গিয়েছে ওই ‘জীবনী’র ঠেলায়! জীবনী, অর্থাৎ তাঁর জীবন অবলম্বনে তৈরি চলচ্চিত্র ‘গুলাব গ্যাং’।

Advertisement

এই সম্পত পালই এক সময়ে বুন্দেলখণ্ডের থানা কার্যত দখল করে নিয়েছিলেন, রেশন-দুর্নীতি নিয়ে বিতর্কের জেরে। গোলাপি শাড়িতে সেজে ডান্ডাপেটা করেছিলেন আমলা ও থানার কর্তাদের। এ সেই সম্পত পাল যাঁর নেতৃত্বে জেগে ওঠা প্রমীলাশক্তি লাঠির ঘায়ে বিষ ঝেড়েছিল এলাকার মাতাল মরদদের। দিনেরাতে যারা বৌদের উপরে অত্যাচার করত। আজ সেই গুলাবি গ্যাংয়ের জঙ্গি নেত্রীই বলছেন, ‘‘লাঠি সে হর সমস্যা কা সমাধান নাহি হোতা। বাৎ করকে সমঝানে সে রাস্তা নিকালতা হ্যায়।’’

২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া গুলাব গ্যাং বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল— এমন খবর নেই। সম্পতও বলেন, ‘‘আমার চরিত্রকে ভুল ভাবে দেখানো হয়েছে। ছবিটা পুরো ‘বকওয়াস’ আর ‘ফর্জি’।’’ কিন্তু ওই ছবির জেরেই সম্পত ও তাঁর বাহিনীর খ্যাতি উত্তরপ্রদেশের চক-চৌরা-কসবা ছেড়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সম্পত পৌঁছে গিয়েছিলেন রিয়ালিটি শো ‘বিগ বস’-এর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত স্টুডিওয়। ব্রাসেলসের লেখক আমানা ফন্তানেলা খান বইও লিখে ফেলেছেন তাঁর কীর্তি নিয়ে, ‘পিংক শাড়ি রেভলিউশন’। সম্পতের সঙ্গেই এই গ্যাং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভাগবৎ দ্বিবেদী। তিনি মনে করালেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে হৈ-চৈ শুরু হওয়ার পরে ফ্রান্স ও ইতালি সরকার সম্পতকে আমন্ত্রণ জানায়। ইতালিতে সনিয়া গাঁধীর মায়ের সঙ্গেও দেখা হয় তাঁর। একটি আংটি উপহার দিয়ে তাঁকে নিজের মেয়ে বলে সম্বোধন করেছিলেন সনিয়ার মা। এর পরেই কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ। এবং রাজনৈতিক জীবনের শুরু।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:
‘মুম্বই কা কিং কৌন?’ ফল প্রকাশের পরে সব দল নিয়ে অঙ্ক কষছে শিবসেনা

এ বছর চিত্রকূট জেলার মানিকপুর নির্বাচনী ক্ষেত্রে কংগ্রেসের টিকিটে লড়েছেন সম্পত। গত কালই ভোট হয়েছে এখানে। ফোনে সম্পতের গলা যথেষ্ট পরিতৃপ্ত। বলছেন, ‘‘যদি জিতে আসি তবে মদ নিষিদ্ধ করার জন্য আওয়াজ তুলব। রাজনীতিতে এসেছি মহিলাদের উপরে নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে। তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে।’’ লাঠি হাতে জঙ্গি নেত্রী নয়, মাইক হাতে জননেত্রীর মতোই লাগছে সম্পতের গলা। বলছেন, ‘‘লাঠিপেটা করে কারও মদ খাওয়ার নেশা ছাড়ানো যায় না। আইন নিজের হাতে তুলেও কোনও লাভ নেই। এক সময় লাঠি হাতে নিয়েছি ঠিকই, কিন্তু আর নয়।’’

লাঠি ছাড়লেও সম্পতের কাছে যে জনসমর্থন আছে সেটা বুঝেছেন রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ যাদব। তাঁরা প্রচারও করেছেন সম্পতের জন্য। মানিকপুরের প্রাক্তন গ্রামসভা নেত্রী সঞ্জু প্রধানের কথায়, ‘‘মানুষের ভরসা রয়েছে ওঁর উপরে। মহিলাদের হয়ে ওঁকে লড়তে দেখেছি নিজের চোখে। মুসলিম, অনগ্রসর, এমনকী ব্রাহ্মণ ভোটও টানবে সম্পত।’’ এ ছাড়া, সম্পতের নিজেরই একটা মজবুত ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। এই গ্যাং-এর ৪ লাখ সদস্য রয়েছে গোটা রাজ্যে। যার মধ্যে শুধু মানিকপুরেই রয়েছেন ২৫ হাজার। মহিলা ভোটারদের মধ্যে যাঁদের প্রভাব প্রবল, এমনটাই মনে করছেন রাহুল-অখিলেশ। ফলে সম্পতকে একটি নির্বাচনী ক্ষেত্রে দাঁড় করিয়ে গোটা রাজ্যেই তার ফসল তোলার চেষ্টায় রয়েছে কংগ্রেস-সমাজবাদী পার্টির জুটি।

আর সম্পত? এখন গঠনমূলক কাজেই বেশি টান তাঁর। রাস্তা, বিদ্যুৎ, টিউবওয়েল, জল সরবরাহ, প্রাথমিক স্কুল, কৃষক ঋণ বাড়ানোর মতো বিষয়য়ের পাশাপাশি আরও একটি অভিনব চিন্তা রয়েছে তাঁর।

এই মানিকপুরেই একটি ফিল্মসিটি তৈরি করা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement