National news

শীলজ থাকবে হার্দিকের পাশেই, কিন্তু গোটা পাটিদার সমাজ থাকবে কি?

আর্থ-সামাজিক দিক থেকে গুজরাতের সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্প্রদায়টা এখন ওই বছর চব্বিশের যুবককে নিয়ে যতখানি ভাবিত, কোনও নীতীন পটেল, কোনও আনন্দীবেন পটেল তার ধারেকাছে আসেন না।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

অমদাবাদ শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৩:৪০
Share:

পাটিদারদের সঙ্গে কথা বলছেন হার্দিক। অমদাবাদে।

গোটা গুজরাত যেন ভুলতে বসেছে তাঁকে। বছর দু’য়েক আগেও তিনিই ছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। পটেলদের কথা বিজেপি ভাবছে না বলে যখন অভিযোগ তুলছে পাটিদার সমাজের বিরাট অংশ, তখন তাঁর মুখটাকে আরও বেশি করে সামনে আনা জরুরি ছিল। নরেন্দ্র মোদী গুজরাত ছেড়ে দিল্লি যাওয়ার সময় তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি এক জন পটেল এবং তাঁকে পদ ছাড়তে হয়েছে হার্দিক পটেলের আন্দোলনের চাপেই— এ কথা আরও বেশি করে এখন মনে করিয়ে দেওয়াই স্বাভাবিক ছিল বিজেপির তরফে। কিন্তু আনন্দীবেন পটেল কোথাও নেই। গুজরাতে বিজেপির ব্যানারে-হোর্ডিংয়ে মোদী, অমিত শাহ আর মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী ছাড়া আর কারও ছবি যদি দেখা যায়, তবে তাঁরা হলেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি জিতু বাঘানি এবং প্রবীণ নেতা তথা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নীতীন পটেল। আনন্দীবেনের ছবি প্রায় কোথাও নেই।

Advertisement

ব্যাতিক্রম শীলজ। অমদাবাদ শহরের সীমানা ছাড়িয়ে একটু এগোলেই শীলজ গ্রাম। আনন্দীবেন পটেল এক সময় এই শীলজেরই বাসিন্দা ছিলেন। তাই শীলজ বাসস্ট্যান্ডের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে ঝোলানো ফ্লেক্সটায় জ্বলজ্বল করছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন পটেলের ছবিও।

কারণ? পটেল বা পাটিদার ভোটব্যাঙ্ক। শীলজ এবং আশপাশের এলাকায় পাটিদার সম্প্রদায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। বিজেপির পটেল মুখ হিসেবে নীতীন পটেলকেই তুলে ধরা হচ্ছে এ বার গোটা রাজ্যে। আনন্দীবেনকে হিসেবেই রাখা হচ্ছে না প্রায়। কিন্তু শীলজের স্থানীয় ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে সেখানকার জন্য আনন্দীবেনের মুখটাকেও ফ্রেমে সামিল করে নেওয়া হয়েছে। এলাকার মেয়ের মুখ চেয়ে যদি ভোট দিয়ে দেন স্থানীয় পাটিদাররা— ভাবনাটা সম্ভবত এ রকমই।

Advertisement

VIDEO: কী বলছেন পাটিদাররা?

হার্দিককে ঘিরে সমর্থকদের উৎসাহ

গোটা পাটিদার সমাজ হার্দিক পটেলের কথায় বিজেপিকে ছুড়ে ফেলতে তৈরি হয়ে গিয়েছে, এমন নয়। কিন্তু হার্দিকের লড়াইকে সমর্থন করছেন না, এমন পাটিদার খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। আর্থ-সামাজিক দিক থেকে গুজরাতের সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্প্রদায়টা এখন ওই বছর চব্বিশের যুবককে নিয়ে যতখানি ভাবিত, কোনও নীতীন পটেল, কোনও আনন্দীবেন পটেল তার ধারেকাছে আসেন না।

‘জাদু’টা কোথায়? কী এমন করলেন হার্দিক যে, পাটিদার সমাজে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন তিনি?

আরও পড়ুন: গুজরাতে পাক ছক দেখছেন মোদী

জবাব দিলেন বংশীরামভাই পটেল। বললেন, ‘‘সবাই বলছে, পটেলরা খুব পয়সাওয়ালা। জমি-জিরেত, সম্পত্তি প্রচুর। ঠিকই বলছে। প্রচুর সম্পত্তি পটেলদের। কিন্তু বাপ-ঠাকুর্দার আমলে যা ছিল, সে সব পরবর্তী প্রজন্মগুলোর মধ্যে ভাগ হতে হতে এখন কার ভাগে কতটুকু পড়ে রয়েছে? ৪০ বছর আগে এক এক জনের ভাগে হয়তো ৪০ বিঘে ছিল। এখন কার ভাগে কতটা? আমরা পয়সাওয়ালা বলে আমাদের কোনও সুযোগ-সুবিধা সরকার দেবে না। পিছু হঠতে হঠতে দেওয়ালে তো পিঠ ঠেকে গিয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যই হার্দিকের পথকে সমর্থন করছি।’’

কিন্তু হার্দিকই কেন? পাটিদার অনামত আন্দোলন সমিতি (পাস) তো হার্দিকের হাত ধরে তৈরি হয়নি। আরও অনেকের মতো হার্দিক পটেলও ওই সংগঠনের কর্মী ছিলেন। বড় বড় নেতাকে পিছনে ফেলে এত কম সময়ে হার্দিক সামনে উঠে এলেন কী ভাবে? বংশীরামভাই বললেন, ‘‘ওর সাহসের জন্য ও সামনে উঠে এল। যখন আন্দোলন শুরু করেছিল, তখন ২২ বছর বয়স ছিল। এখন ২৪। ও আগে-পিছে ভাবে না। বলে, আমার যা হবার হবে, মরলে মরব। কিন্তু যদি কিছু করে যেতে পারি, তা হলে গোটা সমাজ উপকৃত হবে।’’

শুধু হার্দিকই এই রকম বলেন? আর কোনও পাটিদার নেতা এমন বলেন না? ‘‘না, বলেন না, বলতে পারেন না। ২২-২৪ বছরের ছেলের যে তেজ রয়েছে, যে যৌবনের আবেগ রয়েছে, সেটা অন্য কারও মধ্যে থাকবে কী ভাবে? সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন তো অনেক দিন ধরেই চলছিল। কিন্তু নির্ভীকের মতো এগিয়ে এসে আন্দোলনটাকে তুঙ্গে তুলে দিয়েছে তো হার্দিকই। সেই জন্যই আমরা ওর পাশে।’’

বংশীরামভাই পটেলের কথা কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো নয়। হার্দিকের ডাকে সাড়া দিয়ে এ বারের নির্বাচনে অনেক পাটিদারই কংগ্রেসে ভোট দিতে চলেছেন। অন্য একটি অংশ আবার খোলাখুলি জানাচ্ছেন, তাঁরা কংগ্রেসে ভোট দেবেন না, বরাবরের মতো এ বারও বিজেপির পাশেই থাকবেন। কিন্তু হার্দিকের আন্দোলনকে সমর্থনের প্রশ্নে বিভাজন পাটিদারদের মধ্যে কমই। অমিতভাই পটেল বললেন, ‘‘সংরক্ষণের দাবিতে যে আন্দোলন চলছিল, হার্দিকই সেই আন্দোলকে জোরদার করে তুলেছে। ও কাউকে ভয় পায় না। সেই জন্যই সামনের সারিতে চলে এসেছে।’’

হার্দিক পটেল তা হলে পারবেন পটেল সমাজের দাবি আদায় করে নিতে? ‘‘না, পারবেন না।’’ জবাব অমিতভাইয়ের। কেন? ‘‘কারণ আন্দোলনটা বিপথগামী হয়ে গিয়েছে। সংরক্ষণের দাবি জোরদার করে তুলেই হার্দিক সামনে এসেছিল। কিন্তু তার পরে দাবি আদায় গৌণ হয়ে গিয়েছে, রাজনীতিটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এখন নেতা হয়ে ওঠার ইচ্ছাটাই প্রধান।’’ বললেন অমিত ভাই। হার্দিক পটেল যত বড় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন, তাঁকে ততটা বড় করে তোলার নেপথ্যে কংগ্রেসের হাত রয়েছে বলেও অমিতভাইয়ের মতো অনেকে মনে করছেন। রাজনীতির এই অনুপ্রবেশই আন্দোলনটাকে শেষ করে দিয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

তা হলে কী হবে ভোটে? পাটিদাররা কোন দিকে থাকবেন? ‘‘যে পাটিদাররা বিজেপিকে ভোট দিতেন, তাঁরা বিজেপি-কেই দেবেন। যাঁরা কংগ্রেসের পক্ষে ছিলেন, তাঁরা কংগ্রেসকেই সমর্থন করবেন।’’ দাবি অমিতভাই পটেলের।

শীলজের পটেল সমাজে যে বিভাজনের ছবি চোখে পড়ল, তা যদি গোটা গুজরাতের প্রবণতা হয়, তা হলে কিন্তু খুব বড় ধাক্কা অপেক্ষায় নেই বিজেপি-র জন্য। তবে শীলজ এ কথাও বুঝিয়ে দিল যে, বিজেপি বা কংগ্রেস যে-ই আসুক ক্ষমতায়, হার্দিক পটেল আপাতত গোটা সম্প্রদায়ের নয়নের মণিই থাকছেন।

গুজরাত নির্বাচন নিয়ে সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement