গুরু-মন্ত্রে দড়ি টানাটানি

গুজরাত জুড়ে মোরারি বাপুর ভক্তকুল। তিনি সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দিতে বলেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথা উঠলে বলেন, ‘‘ধর্মে মতি রয়েছে, এমন শাসক দেশে কমই আসে।’’ লালজি মহারাজের আশ্রমের বাপু চতুরদাস আবার ভক্তদের বলেন, ‘‘ভোট তাকেই দেবে, যে তোমাকে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে দেবে।’’

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

রাজকোট শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৫
Share:

ভোটের লাইনে পরিচয়পত্র হাতে সুরাতের স্বামীনারায়ণ গুরুকুলের সাধুরা। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

ভক্তেরা হাতজোড় করে গুরুর প্রবচন শুনতে বসেছেন। গুরুদেব রাজনীতির কথা বলেন না। কাকে ভোট দিতে হবে, সেই আদেশ দেন না। শুধু নেতা নির্বাচনের সময়ে কোন গুণাগুণ দেখতে হয়, তা শিখিয়ে দেন। উদাহরণ হিসেবে বলেন, ‘‘যেমন, ঐতিহ্য-পরম্পরার প্রতি নরেন্দ্র মোদীর শ্রদ্ধা শেখার মতো।’’

Advertisement

আর এক গুরুর আশ্রম সৌরাষ্ট্রের গ্রামে গ্রামে ঘুরে রামলীলা আয়োজন করে। তার ফাঁকে প্রবচন। ভক্তদের মন শান্ত করতে গুরু মন্ত্র দেন, ‘‘জিএসটি নিয়ে বেশি স্ট্রেস নিও না। রাস্তা বদল হলে গাড়ির গতি একটু কমেই। তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

গুজরাত জুড়ে মোরারি বাপুর ভক্তকুল। তিনি সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দিতে বলেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথা উঠলে বলেন, ‘‘ধর্মে মতি রয়েছে, এমন শাসক দেশে কমই আসে।’’ লালজি মহারাজের আশ্রমের বাপু চতুরদাস আবার ভক্তদের বলেন, ‘‘ভোট তাকেই দেবে, যে তোমাকে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে দেবে।’’

Advertisement

মোরারি বাপু থেকে জলরাম বাপা, রমেশ ওঝা ওরফে মোটাভাই থেকে লালজি মহারাজ—হিন্দু গুজরাতিদের মন নানা গুরুর চরণে বাঁধা। বোচাসন্ন্যাসী শ্রী অক্ষর পুরুষোত্তম ট্রাস্ট থেকে বিভিন্ন স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়, স্বাধ্যায় পরিবার থেকে গায়ত্রী পরিবার— নানা সম্প্রদায়, নানা গুরু। উৎসব, উপোস, আচার-অনুষ্ঠান নয়। আধ্যাত্মিক উন্নতি, রোজকার জীবনে গুরুর দেখানো পথে চলাতেই তাঁরা বেশি বিশ্বাসী।

এখানেই এগিয়ে নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সুবাদে তাঁর সঙ্গে সব গুরুরই সম্পর্ক দারুণ। এ বার ভোটের প্রচারে এসেও কখনও গাঁধীনগরের অক্ষরধাম মন্দিরের রৌপ্য জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে, কখনও অমদাবাদে স্বামীনারায়ণ গুরুকুলের হাসপাতাল উদ্বোধন করতে ছুটেছেন মোদী। আর বিজেপি নেতারা জেলায় জেলায় প্রবচন, ধর্মীয় সভার আয়োজন করছেন। কোটি কোটি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে ভক্তদের থেকে।
গুরুর আকারে-ইঙ্গিতে বদলাচ্ছে ভোটের দিশা।

গুজরাতের এই গুরু-মাহাত্ম্য রাহুল গাঁধীও জানেন। তাই প্রচারের শুরুটাই করেছিলেন দ্বারকাধীশ মন্দির থেকে। তার পর অক্ষরধাম মন্দির থেকে অম্বাজি, শারদাপীঠ থেকে কৃষ্ণ, কবীর, চামুণ্ডা মাতা থেকে রাজকোটের খোদাল ধাম মন্দির— কিছুই বাদ দেননি। রাজকোটের এই খোদাল ধাম ট্রাস্ট পাতিদারদের জীবনে শেষ কথা। বিশেষ করে সচ্ছল, প্রভাবশালী লেউভা পটেলদের মধ্যে তার প্রভাব প্রশ্নাতীত।

কড়ভা পটেলদের পাশাপাশি লেউভাদের ভোট টানতে হার্দিক পটেল গত সপ্তাহেই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নরেশভাই পটেলের দরবারে এসেছিলেন। শেষ বেলায় তাঁকে টেক্কা দিতে শনিবার প্রথম দফার ভোটের আগের দিন বিজেপি নেতারাও শরণাপন্ন হন ট্রাস্টের। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা ছড়িয়ে দিয়েছেন, খোদাল ধামের আশীর্বাদ বিজেপির সঙ্গে। খোদাল ধাম অবশ্য জানিয়েছে, তেমন কোনও নির্দেশ নেই।

গুরুদের নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে গুজরাতে। তার মাঝখানে ফেঁসে কেউ কেউ বিপদেও পড়েছেন। স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী স্বামী ভক্তিপ্রসাদ জুনাগড়ের কাছে বিজেপির হয়ে প্রচার করতে গিয়ে মারধর খেয়েছেন। গুরু-মন্ত্রেও রেহাই পাননি তিনি।

গুজরাত নির্বাচন নিয়ে সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement