চা বেচেছি দেশকে নয়, পাল্টা মোদী

গত কয়েক মাসে রাহুল গাঁধী গুজরাতে গিয়ে প্রচারকে উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়েছেন। আর আজ প্রথম দিনের প্রচারে রাহুলকে মোকাবিলা করার জন্য যে অস্ত্রটি ব্যবহার করলেন নরেন্দ্র মোদী— তা হল তিনি গুজরাতের ‘ভূমিপুত্র’। আর রাহুল ‘বাইরের লোক’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

ভূমিপুত্র: গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রচারে গিয়ে জনতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার ভুজে। ছবি: পিটিআই।

কখনও সাদা, কখনও লাল-হলুদ।

Advertisement

একেকটি সভায় এক এক রঙের পাগড়ি। মুখে একটাও হিন্দি শব্দ নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চারটি সভা করে গেলেন। নিজের রাজ্যের ভোটারদের মন ছুঁতে বললেন শুধু গুজরাতি ভাষাতেই। গত কয়েক মাসে রাহুল গাঁধী গুজরাতে গিয়ে প্রচারকে উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়েছেন। আর আজ প্রথম দিনের প্রচারে রাহুলকে মোকাবিলা করার জন্য যে অস্ত্রটি ব্যবহার করলেন নরেন্দ্র মোদী— তা হল তিনি গুজরাতের ‘ভূমিপুত্র’। আর রাহুল ‘বাইরের লোক’।

সুকৌশলে এই অস্ত্রেই আজ গুজরাতি আবেগ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। ভোটারদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘গুজরাতের এই ‘সন্তান’-এর উপরে দুর্নীতির কোনও দাগ নেই। আর কেউ (রাহুল গাঁধী) বাইরে থেকে এসে উল্টোপাল্টা অভিযোগ এনে তাঁকে অপমান করে যাবে, সেটা এ রাজ্যের মানুষ কিছুতেই মেনে নেবে না।’’ কংগ্রেসের সঙ্গে গুজরাতিদের দূরত্ব বোঝাতে চেষ্টা চালিয়ে যান মোদী। বলেন, ‘‘গুজরাতিদের কখনই পছন্দ করেনি কংগ্রেস। সর্দার পটেলকে কোণঠাসা করেছিল তারা। তাঁর মেয়ে মণিবেনের ডায়েরি পড়লেই জানা যাবে, পটেল কত দুঃখ পেয়েছেন। এ রাজ্যের আর এক সন্তান, যিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গুজরাতিদের গর্বিত করেছেন, সেই মোরারজি দেশাইকেও অপমান করেছিলেন ইন্দিরা গাঁধী।’’

Advertisement

এর সঙ্গেই নিজের প্রসঙ্গ টেনে মোদীর দাবি, গরিব ঘর থেকে উঠে এসে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলেই তাঁকে কংগ্রেসের এত অপছন্দ। কংগ্রেস তাঁকে চাওয়ালা বলে, গরিব বলে মজা করে। কংগ্রেসকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘হ্যাঁ, আমি চা বেচেছি, দেশকে নয়।’’ রাহুলের অভিষেকের মুখেই মোদী স্পষ্ট করেন, চাওয়ালা বিতর্ক জিইয়ে রেখে কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রকে আক্রমণ করে যাবেন তিনি।

সকালে কচ্ছের ‘আশাপুরা মাতা’ মন্দিরে পুজো দিয়ে শুরু হয় প্রচার। তার পরে সভাগুলিতে মোদীর নিশানায় ছিলেন রাহুল ও তাঁর দল। জঙ্গি হাফিজ সইদের প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেসকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দেন তিনি, জাতীয়তাবাদের হাওয়া তোলার চেষ্টা করেন। মোদীর অভিযোগ, মুম্বই হামলার পরে কংগ্রেস চুপ ছিল। আর উরির পরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে। তা নিয়েও প্রমাণ চেয়েছে কংগ্রেস, এমনকী তারা অবিশ্বাস করেছে দেশের সেনার কাজে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কোনও ছবি আছে কিনা, জানতে চেয়েছিল কংগ্রেস। আর জঙ্গি হাফিজ সইদকে পাকিস্তান ছাড়ার পরে কংগ্রেস এ দেশের সরকারের ব্যর্থতাকেই তুলে ধরছে। এই সময়েই রাহুল টুইট করে মোদীর উদ্দেশে বলেছিলেন ট্রাম্পকে আরও আলিঙ্গন করতে। আজ তারই জবাব দেন মোদী। তাঁর তির, ডোকলামে ভারতীয় সেনা যখন অনড়, তখনই চিনা রাষ্ট্রদূতকে আলিঙ্গন করেছিলেন রাহুল।

গুজরাতের প্রচারে গিয়ে যে সব অভিযোগ এনেছেন রাহুল, তার অনেক কিছুই এড়িয়ে গিয়েছেন মোদী। তবে নোটবন্দির এক বছর পরেও কংগ্রেসের বিক্ষোভ দেখে মোদীর বক্তব্য, যাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, হইচই তারাই করছে। আর জিএসটিতে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বন্ধ ঘরে সমর্থন করেও বাইরে এসে বিরোধিতায় নেমেছে তারা।

পরে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে টুইট করেন রাহুল। বলেন, ‘‘মুখে ভাঁজ, মাথায় ঘাম। সাহেব রয়েছেন ভয়ে ভয়ে। জানি না রাফালের প্রশ্নে শাহজাদার ঠোঁট কেন সেলাই করা রয়েছে।’’ কংগ্রেস সূত্রের খবর, মোদীর প্রচারের শেষে ফের গুজরাতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন রাহুল, পাল্টা জবাব দিতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement