প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে যে কয়লা কেলেঙ্কারিকে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি, এ বারে নরেন্দ্র মোদী জমানায় সেই কয়লা নিয়ে কেলেঙ্কারিকেই হাতিয়ার করে সুর চড়াল কংগ্রেস। মোদী জমানায় কয়লা ব্লক বণ্টনের নামে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দিন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ও মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, মোদী সরকারের কয়লা নীতির বিরোধিতা করে বিজেপিরই একাধিক নেতা সরকারকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু ‘পরম মিত্র’ আদানি গোষ্ঠীকে সুবিধা করে দিতে সেই সব সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করে বিপুল লাভজনক এবং ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি কয়লা ব্লকগুলিকে তাদের সবচেয়ে বড় ‘চাঁদাপ্রদানকারী মিত্র’র হাতে তুলে দিয়েছে মোদী সরকার। রমেশের কটাক্ষ, এ হল মোদীর ‘চাঁদা দাও, কয়লা নাও’ নীতি!
সদ্য প্রকাশিত শ্বেতপত্রের প্রসঙ্গ টেনে রমেশ জানান, মোদী সরকারের শ্বেতপত্রের শুরুতেই রয়েছে ‘কয়লাগেট কেলেঙ্কারি ২০১৪’-র প্রসঙ্গ। কিন্তু আসল কেলেঙ্কারি হয়েছে গত ১০ বছরের ‘অন্যায় কালে’। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তাঁর বক্তব্য, কয়লা যে হেতু একাধিক শিল্পে ব্যবহার করা যায়, সে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থার পাশাপাশি সিমেন্ট, ইস্পাত নির্মাতারাও কয়লা ব্লকগুলির নিলামে অংশগ্রহণ করে। তার ফলে সরকারও দামের নিরিখে লাভবান হয়। কিন্তু মোদী সরকার নিয়ম বদল করে জানিয়ে দেয়, প্রতিটি কয়লা ব্লকের নিলামে এক ধরনের ব্যবহারকারীই অংশ নিতে পারবে। এর ফলে নিলামে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কমে যায়, দাম বেশি দূর উঠতে পারে না এবং তাতে রাজকোষের বিপুল ক্ষতি হয়।
পবন খেরা দাবি করেন, ক্ষমতায় আসার পরেই মোদী সরকার কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে এই নয়া নিয়ম চালু করে। ঠিক হয়, ৪১০০ কোটি টন কয়লাসমৃদ্ধ ২০০টি কয়লা ব্লক নিলামে তোলা হবে। খেরার দাবি, তখন বিজেপির অন্দরেও নয়া নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলেন অনেকেই। সরকারকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেন বিজেপির দুই সাংসদ আর কে সিংহ (বর্তমানে বিদ্যুৎমন্ত্রী) এবং রাজীব চন্দ্রশেখর (বর্তমানে ইলেকট্রনিক ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী)। সে সময় কয়লা মন্ত্রী ছিলেন পীযূষ গয়াল এবং অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত অরুণ জেটলি। বিষয়টি জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। কিন্তু তাঁদের আপত্তি গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেনি মোদী সরকার। দিল্লি হাই কোর্টও বিষয়টি নিয়ে সরকারকে সতর্ক করেছিল বলে দাবি করেন রমেশ।
কংগ্রেসের নেতাদের অভিযোগ, মোদী সরকারের নয়া নীতির সুযোগ নিয়ে আসরে নামে আদানি গোষ্ঠী। তাদেরই দু’টি সংস্থা নিলামে অংশ নেয় এবং বিপুল কম দাম দিয়ে উচ্চমানের কয়লাসমৃদ্ধ খনিগুলিকে দখল করে। রমেশের অভিযোগ, যখন অন্য খনিগুলি সরকারকে আয়ের ২৭ শতাংশ দেয়, তখন আদানি গোষ্ঠী উত্তর পশ্চিম মাধেরি ব্লকের আয়ের মাত্র ৫.৫ শতাংশ সরকারকে দিয়েই খনির দখল পেয়েছে। ২০১৬ সালের সিএজি রিপোর্টেও এই বিপুল অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল বলে দাবি করেন খেরা। অন্তত ১১টি ব্লকের অনিয়মের কথা বলা হয়েছিল সিএজি রিপোর্টে। তাঁর আরও অভিযোগ, মোদী সরকারেরই পরিবেশ মন্ত্রক এবং বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারিকে উড়িয়ে দিয়েই গভীর অরণ্যে কয়লা খনি নিলামে তুলেছে মোদী সরকার। এবং আদানি গোষ্ঠীই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খনির সত্ত্ব পেয়েছে বলে দাবি করেন খেরা। কংগ্রেসের অভিযোগ, কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলা দুই বিজেপি সাংসদকেই কেন্দ্রে মন্ত্রী করে সব ধামাচাপা দিতে চেয়েছে মোদী সরকার। একই সঙ্গে রমেশের দাবি, যে সময় এই কেলেঙ্কারি হয়েছে, সে সময় বিজেপির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন দেশের কয়লামন্ত্রী! খেরার কটাক্ষ, ‘‘শ্বেতপত্রে কেলেঙ্কারির কালো ঢাকা দেওয়া যায়নি।’’
মোদী সরকারের অর্থনীতি নিয়েও আজ তোপ দেগেছেন রমেশ। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করেন, মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বে দেশে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা বিপুল ভাবে কমে গিয়েছিল। অনেকেই উচ্চ আয়ের পেশায় চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু মোদী সরকারের ভ্রান্ত আর্থিক নীতির কারণে সেই সংখ্যা বিপুল হারে বেড়েছে। মোদী সরকারের ভুল নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি ২০ বছর পিছিয়ে গিয়েছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন রমেশ।