প্রতীকী ছবি
শেষ বার ২০১৫ সালে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল প্রায় ৮ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন। তার পর গত তিন বছরে দেশে ঠিক কত জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন, সে বিষয়ে কোনও তথ্যই সংগ্রহ করেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার।
গত ৩ বছরে দেশে কত চাষি আত্মহত্যা করেছেন, দিন দু’য়েক আগে লোকসভায় কৃষিমন্ত্রীর কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। জবাবে কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ বলেন, ‘‘কৃষক আত্মহত্যা সংক্রান্ত কোনও সংখ্যা নেই। ওই তথ্য আসে জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো থেকে। তারা ২০১৫ সালে শেষ বার ওই সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছিল।’’
আগামী ২০২২ সালের মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে মোদী সরকার। অথচ, বছরে কত জন চাষি আত্মহত্যা করছেন এবং তাঁরা কেন আত্মহত্যা করেছেন, তা না জেনে আয় দ্বিগুণ করার সরকারি দাবি হাস্যকর বলে মনে করেন দীনেশ। তাঁর কথায়, ‘‘চাষিদের আত্মহত্যার মূল কারণগুলির সমাধানের চেষ্টা না করলে কিছুই হবে না। অথচ, চাষিরা যে আত্মহত্যা করছেন সেই সত্যটিকেই সরকার ঢাকতে চায়। সে জন্য চাষিদের আত্মহত্যার বিষয়টি সার্বিক আত্মহত্যার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।’’
কেন্দ্রের অবশ্য পাল্টা যুক্তি— চাষিদের একাংশ অবসাদ, অসুস্থতা, রাজনৈতিক কারণ, সম্পত্তি বিবাদের মতো নানা কারণে আত্মহত্যা করেন। ব্যক্তিগত কারণে আত্মহত্যার ঘটনাও জুড়ে যায় ফসলের দাম না পাওয়া, চাষে বিপর্যয়ের মতো ঘটনার সঙ্গে। তাই আলাদা করে চাষিদের আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ পানাগড়িয়াও মনে করেন, কৃষিজনিত কারণে মাত্র ২৫% কৃষক আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার প্রধান কারণ, ব্যাঙ্কের বদলে মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার ও সেই ঋণের ফাঁস।
সিপিএমের পাল্টা দাবি, মোদী জমানায় গোটা দেশে চাষিদের আত্মহত্যা ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের ৭০% মানুষের জীবিকা যে কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে, সেই কৃষি ক্ষেত্রের সার্বিক পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করেন সিপিএমের কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা। তার মতে, ‘‘কৃষকদের প্রকৃত দুরবস্থার ছবিটি সরকার ধামাচাপা দিতে চাইছে। তাই কৃষক আত্মহত্যার বিষয়টি আলাদা করে প্রকাশ করতে চাইছে না।’’ কিন্তু মন্দসৌর কিংবা সম্প্রতি মুম্বই-দিল্লিতে যে ভাবে কৃষক অসন্তোষের ঢেউ আছড়ে পড়েছে, তাতে সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের ক্ষোভ যে বাড়ছে, তা বুঝছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরাও।