ফাইল চিত্র।
সরকার পক্ষের বলা কাহিনি ভাল হলেও তার পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ চাই বলে মন্তব্য করল আদালত। যুবকদের আইএসে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করার মামলায় ইসলামি ধর্মগুরু জ়াকির নাইকের সংস্থার এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল এনআইএ। আরশি কুরেশি নামে ওই ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছে মুম্বইয়ের এনআইএ আদালত। সেই মামলাতেই এই মন্তব্য করেছেন বিচারক।
২০১৬ সালে আশফাক মাজিদ নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে আশফাক তার বোনকে জানায়, সে আইএসে যোগ দিয়েছে। এর পরেই আশফাকের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে এনআইএ জ়াকির নাইকের সংস্থার কর্মী আরশি কুরেশিকে গ্রেফতার করে। আশফাকের বাবা অভিযোগ করেন, কুরেশিই আশফাককে আইএসে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
আদালতে সরকারি কৌঁসুলি সুনীল গনসালভেস জানান, আশফাকের বাড়িতে তার ও তার সঙ্গীদের উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত জেহাদি ভাবধারার ক্লাস নিত মামলার আর এক অভিযুক্ত আব্দুল রশিদ আবদুল্লা। সেখানে বলা হত, ভারতে শরিয়তি আইন চালু হয়নি। আব্দুল রশিদ আবদুল্লার সঙ্গে ‘ডার্ক ওয়েব’-এর মাধ্যমে আইএস জঙ্গিদের যোগাযোগ ছিল বলেও জানান সরকারি কৌঁসুলি।
আরশি কুরেশির কৌঁসুলিরা জানান, কেরলের কয়েক জন যুবকের আইএস-যোগ নিয়ে সে রাজ্যের দু’টি থানা তদন্ত করছে। সেই মামলার সঙ্গে কুরেশিকে জড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে এনআইএ। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই।
বিচারকের বক্তব্য, ‘‘সরকার পক্ষের কাহিনি আকর্ষণীয় হতে পারে। কিন্তু তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ চাই।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আশফাক মাজিদের বাবা, বোন ও ভাইয়ের জবানবন্দিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছে এনআইএ। কিন্তু তাঁদের জবানবন্দিতে কুরেশির তরফে জঙ্গি সংগঠনকে সাহায্য প্রসঙ্গে কোনও বক্তব্য নেই।
বিচারক আরও জানান, আশফাক মাজিদি তার ভাইকে মোবাইলে একটি ‘ভয়েস মেসেজ’ পাঠিয়ে আইএসের সঙ্গেই যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছিল বলে জানিয়েছে এনআইএ। কিন্তু সেই বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, সেই ‘ভয়েস মেসেজ’-সহ আশফাকের ভাইয়ের মোবাইল এনআইএ বাজেয়াপ্ত করেনি। আবার দু’জনকে ধর্মান্তরিত করা নিয়েও কুরেশির বিরুদ্ধে অভিযোগ ধোপে টিকছে না। কারণ, সেই দু’জন আদালতে জানিয়েছেন তাঁদের কুরেশির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। কুরেশি তাঁদের কখনও কোনও আপত্তিকর কথাও বলেননি। ফলে কুরেশির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এনআইএ। তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন বিচারক।
জ়াকির নাইকের বক্তব্যেও জঙ্গিরা অনুপ্রাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের তদন্তকারীরা। তাঁর বিরুদ্ধে ভারত সরকার পদক্ষেপও করে। তিনি আপাতত মালয়েশিয়ায়। ভারত বারবার অনুরোধ করলেও ইন্টারপোল জ়াকিরের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করতে রাজি হয়নি।