জি এন সাইবাবা। —ফাইল চিত্র।
মাওবাদী-যোগে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন থাকতে হয়েছিল জেলে। দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে গত মার্চ মাসে বম্বে হাই কোর্টের নির্দেশে মুক্তি পেয়েছিলেন ইউএপিএ মামলা থেকে। আজ হায়দরাবাদের এক হাসপাতালে মৃত্যু হল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ও সমাজকর্মী জি এন সাইবাবার। বিশেষ ভাবে সক্ষম বছর আটান্নর সাইবাবা গলব্লাডার স্টোনের চিকিৎসার জন্য সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন বলে পরিবার সূত্রে খবর। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পরে তাঁর শারীরিক সমস্যা বাড়ে। শেষ পর্যন্ত হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
অন্ধ্রপ্রদেশের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান সাইবাবা বরাবরই বামপন্থী হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে মাওবাদী-দমনে শুরু হওয়া তৎকালীন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’-এর প্রবল সমালোচনা করেন তিনি।
২০১৪ সালে প্রথমে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সাইবাবার বাসভবনে হানা দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। মে মাসে তাঁকে মাওবাদী-যোগে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৫ সালের জুন মাসে বম্বে হাই কোর্টে জামিন পান সাইবাবা। কিন্তু ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ফের জেলে ফিরতে হয় তাঁকে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ফের মুক্তি পান তিনি।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলি জেলার আদালত তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। এই রায়ের জেরে ‘ভারত বন্ধ’-এর ডাক দেয় মাওবাদীরা। বিশেষ ভাবে সক্ষম সাইবাবার মুক্তির দাবিতে সরব হয় নানা শিবির। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনের এক বিশেষজ্ঞ দলও তাঁর মুক্তির জন্য ভারত সরকারের কাছে দাবি জানায়। ২০২০-র ২৮ জুলাই শারীরিক কারণে পেশ করা তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে বম্বে হাই কোর্ট। তাঁর মার মৃত্যুর সময়ে দেখা করার অনুমতিও পাননি। ২০২১ সালে
তাঁকে বরখাস্ত করে দিল্লির রামলাল আনন্দ কলেজ।
২০২২ সালের অক্টোবরে সাইবাবা ও আরও পাঁচ অভিযুক্ত বম্বে হাই কোর্টে মুক্তি পান। হাই কোর্টের বেঞ্চ জানায়, তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমতি নেওয়া হয়নি। ফলে নিম্ন আদালতের গোটা আইনি প্রক্রিয়াই ভিত্তিহীন। কিন্তু মহারাষ্ট্র সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট ফের তাঁর মুক্তির নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। হাই কোর্টকে ফের সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
চলতি বছরের মার্চ মাসে সাইবাবা ও অন্য পাঁচ অভিযুক্তকে ফের মুক্তি দেয় হাই কোর্ট। সাইবাবার তরফে দাবি করা হয়, বিশেষ ভাবে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যন্ত দেননি নাগপুর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।