বিলকিস বানো। ছবি: সংগৃহীত।
কুড়ি বছর আগের বিভীষিকা আর ক্ষত আবার দগদগে হয়ে উঠছে তাঁর মনে। আজাদির অমৃত মহোৎসবের দিনটি তাঁর কাছে হয়ে দাঁড়াল ভাষা আর ‘ন্যায়ের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলা’র দিন। ভয় না পেয়ে শান্তিতে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন, গুজরাত সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন তিনি।
১৫ অগস্ট গুজরাতে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে সেই ১১ জন, যারা ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করেছিল। তাঁর তিন বছরের মেয়েকে আছড়ে মেরেছিল তাঁর চোখের সামনে। ‘খুন’ করেছিল তাঁর পরিবারের মোট ৮ জনকে। ২০০৮ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত সেই ১১ জন আজাদির স্বাদ পেয়েছে এই ১৫ অগস্ট। আর বিলকিসকে আবার নতুন করে ঘিরে ধরেছে আতঙ্ক আর নৈরাশ্য।
২০ বছর আগে বিলকিসের বয়স ছিল ২১। এখন ৪১। অপ্রত্যাশিত এই পট পরিবর্তনের পরে বুধবারই প্রথম সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললেন তিনি। বললেন, ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা তাঁর নড়ে গিয়েছে। বললেন, ‘‘দু’দিন আগে ১৫ই অগস্টের দিন বিগত ২০ বছরের আতঙ্ক আবার আমায় গ্রাস করল, যখন আমি শুনলাম আমার জীবন, আমার পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া ১১টা লোক মুক্তি পেয়ে গেল। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখনও বোবা হয়ে আছি।’’
প্রতিটি শব্দে হতাশা ঝরে পড়েছে বিলকিসের বিবৃতিতে। তিনি বলেছেন, ‘‘এক জন মহিলার প্রতি ন্যায়বিচার এই ভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে? আমি তো শীর্ষ আদালতে বিশ্বাস রেখেছিলাম, সিস্টেমে বিশ্বাস রেখেছিলাম, একটু একটু করে আমার ক্ষতগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচতে শিখছিলাম। দোষীদের মুক্তি আমার শান্তি ছিনিয়ে নিল, ন্যায়ের প্রতি আমার বিশ্বাস নড়ে গেল। আমি শুধু আমার কথা বলছি না। প্রতিটি মেয়ে যারা আদালতে ন্যায়ের জন্য লড়ছে, তাদের সকলের জন্য কষ্ট হচ্ছে আমার।’’
বিলকিসের স্বামী ইয়াকুব রসুলও বলছেন, ‘‘এক লহমায় ১৮ বছরের লড়াইটা শেষ হয়ে গেল। আমাদের খুব ভয় করছে। কী করব জানি না।’’ বাসস্থান পরিবর্তন করতে হবে কি না, বুঝতে পারছেন না এখনও। গুজরাত সরকারকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্য অবশ্য অনুরোধ জানিয়েছেন বিলকিস। লিখেছেন, ‘‘আমাদের এই ক্ষতিটা করবেন না। ভয়হীন, শান্তির জীবন বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন।’’ তবে গুজরাতের বাস্তব চিত্র থেকে তাঁর আবেদন ফলপ্রসূ হবে এমন আশা খুব দেখা যাচ্ছে না। গুজরাত প্রশাসন এক দিকে আইনের খুঁটিনাটি দেখাচ্ছে, অন্য দিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ধর্ষকদের মালা পরিয়ে মিষ্টি খাইয়ে সংবর্ধনা দিচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ মনে করছেন, ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে, ২০০২ বিজেপির কাছে খাতায়কলমেও আর কোনও ‘কলঙ্ক’ নয়। তিস্তা শেতলবাদেরা জেলে গিয়েছেন। সামনে ভোট। ২০০২-এর ‘বীর’দের পুনর্বাসিত করাই এখন মেরুকরণের নতুন তাস। বিরোধীদের মতে, শান্তিতে বাঁচার অধিকার খুইয়ে ফেলা বিলকিস বানোদের জন্য আজাদির অমৃত-উপহার এ-ই।