গিরির কাঁধে গরুর ভার

মন্ত্রীদের গত কাল শপথবাক্য পাঠ করানোর পরে তাঁদের মন্ত্রক বণ্টন করতে প্রায় গোটা এক দিন সময় নিয়ে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী। আর সে কাজ শেষ হলে দেখা গেল, পুরনো অনেক মুখ যেমন আগের মন্ত্রকে রয়ে গেলেন, তেমনই খোলনলচেই বদলে গেল অনেক মন্ত্রকের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৩:৩০
Share:

গিরিরাজ সিংহ

সেই উমাও নেই, গঙ্গারও ‘গঙ্গাপ্রাপ্তি’ হল! তার বদলে দ্বিতীয় দফায় গিরিরাজের কাঁধে গরুর গুরুভার চাপিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

মন্ত্রীদের গত কাল শপথবাক্য পাঠ করানোর পরে তাঁদের মন্ত্রক বণ্টন করতে প্রায় গোটা এক দিন সময় নিয়ে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী। আর সে কাজ শেষ হলে দেখা গেল, পুরনো অনেক মুখ যেমন আগের মন্ত্রকে রয়ে গেলেন, তেমনই খোলনলচেই বদলে গেল অনেক মন্ত্রকের। যেমন কৃষির সঙ্গে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ— এই মন্ত্রক দু’টিকে মিশিয়ে তার ভার দেওয়া হল নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে। এ ভাবে বদল হয়েছে আরও অনেক দফতরেরই।

যেমন কপাল পুড়েছে গঙ্গার। তাঁর বড় পছন্দের নদীকে দূষণমুক্ত করতে প্রথম দফায় জলসম্পদ ও নদী উন্নয়নের সঙ্গে গঙ্গা পুনরুজ্জীবনের জন্য মোদী একটি মন্ত্রক তৈরি করলেও তার কাজ বিশেষ হয়নি। বিরোধীরা বলতেন, দূষণমুক্ত হওয়ার বদলে মোদীর পাঁচ বছরে গঙ্গা আরও দূষিত হয়েছে। ক’দিন আগেই প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গিয়েছে, পান তো দূর, গঙ্গার জল এখন স্নানেরও অযোগ্য! আজ মন্ত্রক বিন্যাসের পরে দেখা গেল, গঙ্গার নামে মন্ত্রকটিরই গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটেছে দ্বিতীয় দফায়! বদলে দেশের সব নদী-নালা জুড়ে তৈরি হয়েছে ‘জল শক্তি’ মন্ত্রক। আর কৃষি মন্ত্রকের অধীনে থাকা পশুপালন, দুগ্ধ ও মৎস্য বিভাগকে পৃথক একটি মন্ত্রক হিসেবে গড়ে গিরিরাজ সিংহকে তার দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পোলিয়ো টিকাকরণের ধাঁচে গিরিরাজের মন্ত্রকের অধীনে দেশজুড়ে গরুদের টিকাকরণের সিদ্ধান্তও বিকাল গড়াতে নিয়ে ফেলল নতুন মন্ত্রিসভা।

Advertisement

প্রথমে উমা ভারতীকে গঙ্গা-মন্ত্রকের ভার তুলে দিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু সে কাজের অবস্থা দেখে গঙ্গার পুনরুজ্জীবন মন্ত্রকটি দেওয়া হয় নিতিন গডকড়ীকে। ওই পর্যন্তই! কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা বারেবারে অভিযোগ করেছে, পাঁচ বছরে গঙ্গা সাফ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ মোদী সরকার। যদিও সরকারের মন্ত্রীরা সে দাবি মানেনইনি। উল্টে বিজেপি সমর্থকরা প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, মোদী আমলে গঙ্গা এত শুদ্ধ হয়েছে যে, তার জল এখন খাওয়াও যাচ্ছে। খোদ গডকড়ীও সেই দাবির সমর্থনে মুখ খোলেন। যদিও পরে দেখা যায়, আগাগোড়া ছবিটিই জাল! এ নিয়ে বিরোধীদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও সহ্য করতে হয় বিজেপিকে। আজ মন্ত্রক বণ্টনে গঙ্গার নামে আলাদা মন্ত্রকটিই উঠে গেল!

জোধপুর কেন্দ্রে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের ছেলেকে হারিয়ে লোকসভায় এসেছেন গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। তাঁকে গত সরকারের প্রতিমন্ত্রী থেকে সোজা পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর হাতেই ‘জলশক্তি’ নামে নতুন মন্ত্রক তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন, পানীয় জল, নিকাশি, গঙ্গা— সবই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আজ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়ে শেখাওয়াত বলেন, ‘‘শুধু গঙ্গা নয়, যমুনা-সহ দেশের সব নদী ও উপনদীরই উন্নয়ন করা হবে।’’

গঙ্গা বিসর্জন দিলেও আরএসএসের পথ ধরে পশুকল্যাণ মন্ত্রক আলাদা ভাবে তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বেগুসরাইয়ে বাম ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারকে হারিয়ে লোকসভায় এসেছেন গিরিরাজ। তিনি আগে কথায় কথায় মোদী-সরকারের সমালোচকদের ‘দেশ-বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানে পাঠানোর কথা বলতেন! সেই গিরিরাজের উপরেই গরুর ভার দিলেন মোদী। দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই মন্ত্রক আগেও সামলেছি। আমি খুশি এই মন্ত্রকের ভার পেয়ে।’’ গিরিরাজের সঙ্গে আরও দু’জন প্রতিমন্ত্রীকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিকালে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই মোদী সিদ্ধান্ত নেন, দেশের ৩০ কোটি গরু-মোষ, ২০ কোটি ছাগল-ভেড়া এবং ১ কোটি শুয়োরের টিকাকরণ হবে। যাতে তারা রোগের থেকে মুক্তি পায়। যে ভাবে টিকাকরণের মাধ্যমে পোলিয়ো নিয়ন্ত্রণ করা গেছে, গরুদের ক্ষেত্রেও সেই লক্ষ্যই নেওয়া হয়েছে। আগে এই প্রকল্পে কেন্দ্র ৬০ শতাংশ ও রাজ্য বাকিটা বহন করত। এ বারে ১৩ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ভার বহন করে কেন্দ্রীয় সরকার টিকাকরণের পুরো টাকাটাই দেবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement