ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা দিল্লি। ছবি- সংগৃহীত।
এ বারও এই অক্টোবর-নভেম্বর থেকেই জমজমাট ধোঁয়াশায় শ্বাস-বন্ধের আশঙ্কায় ভুগছে দিল্লি। রাজধানীর বাসিন্দারা খুব ভালো ভাবেই জানেন, এই যন্ত্রণা থেকে অদূর ভবিষ্যতেও তাঁদের নিষ্কৃতির সম্ভাবনা নেই বিন্দুমাত্র।
কারণ, নতুন ফসল ওঠার পর খড়বিচালি পোড়ানোর জন্য পঞ্জাব ও হরিয়ানার চাষিরা বিঘের পর বিঘে জুড়ে ক্ষেতখামারে আগুন জ্বালাবেনই। আর সেই ধোঁয়াই দিল্লির বাতাসে আরও বেশি করে পুরে দেবে বিষ। দিল্লির বাতাস করে তুলবে আরও ভারী, শ্বাসরুদ্ধকর ও বিষময়। যার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার স্বপ্নও আর দেখেন না দিল্লিবাসীরা।
হরিয়ানার গ্রামগুলি দিল্লি থেকে বড়জোর ৭৫ মাইল দূরে। আর পঞ্জাবের গ্রামগুলির দূরত্ব খুব বেশি হলে ২০০ মাইল। প্রতি বছরই শীত আসার আগে সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে নতুন ফসল ওঠার সময় পর্যন্ত খেতখামারে শুকনো খড়বিচালি পুড়িয়ে দেন চাষিরা। তাঁদের চাষবাসের প্রয়োজনে। তাতে যে বাতাসে বিষ ছড়াচ্ছে, তা জেনে-বুঝেই বছরের পর বছর ধরে এটা করে চলেছেন পঞ্জাব ও হরিয়ানার চাষিরা। তাঁরাও জানেন ভোট বড় বালাই! ভোটের জন্য পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষিনির্ভর গ্রামগুলির গায়ে ‘হাত’ দেবে না পুলিশ ও প্রশাসন। বিজেপি, কংগ্রেস বা অকালি কোনও রাজনৈতিক দলই নয়।
দিল্লি থেকে ৭৫ মাইল দূরে হরিয়ানার ইশারাগড় গ্রামের কৃষক হরপাল সিংহ বললেন, ‘‘আমরা জানি, এই খড়বিচালি পোড়ালে যে ধোঁয়া হয়, তা খুবই বিষাক্ত। এটা বাতাসে ভরে দেয় আরও বেশি বিষ। কিন্তু এটা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনও রাস্তাও খোলা নেই। শস্যের অবশেষ নষ্ট করার এর চেয়ে সস্তা আর সহজ উপায় আর কিছু নেই।’’
আরও পড়ুন- দুর্ঘটনার দায় নিল না কেউই! ক্ষোভে ফুঁসছে অমৃতসর
আরও পড়ুন- নভেম্বরের ছায়া, ফের দূষণের চাদরে ঢাকা পড়ল রাজধানী দিল্লি
সহজ উপায় প্রশাসনের হাতে যেটা ছিল, তা হল আইনি ব্যবস্থা। প্রচুর অঙ্কের জরিমানা। হরিয়ানা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক পদস্থ কর্তা এস নারায়ণনের দাবি, ৩ লক্ষ টাকা জরিমানার নিয়ম চালু হয়েছে এই সব ক্ষেত্রে। তাতে এমন ঘটনার সংখ্যা কোনও কোনও জায়গায় ৪০ শতাংশ কমেছে।
কিন্তু ঘটনা হল, চাষিদের আর্থিক জরিমানা করে এই সমস্যা মেটাতে গররাজি প্রায় সবক’টি রাজনৈতিক দলই। কারণ, হরিয়ানা ও পঞ্জাবের চাষিরা তাদের বড় ভোটব্যাঙ্ক। সে ক্ষেত্রে আরও একটি রাস্তা খোলা ছিল। ‘হ্যাপি সিডার্স’ নামে একটি যন্ত্র। ওই যন্ত্রের মাধ্যমেও শস্যের অবশেষ নষ্ট করে ফেলা যায়। কিন্তু তার এক-একটার দাম দেড় লক্ষ টাকা বা তার কিছু বেশি। হরিয়ানা ও পঞ্জাব সরকার ওই যন্ত্র কেনার জন্য চাষিপিছু ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিতে রাজি ছিল। কিন্তু দেনার বোঝায় ডুবে থাকা চাষিরা তা কিনতে চাইছেন না, ঋণ নিলে তা তাঁদের কাঁধের বোঝাটা আরও ভারী করবে বলে। এমনটাই বললেন হরিয়ানার ইশারাগড় গ্রামের কৃষক কার্নেল সিংহ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’) বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত যে ১৫টি শহরের নাম প্রকাশ করেছে, তার ১৪টিই ভারতের। আর দিল্লি তাদের মধ্যে রয়েছে শীর্ষে।
সেই দিল্লির যে এ বারও নভেম্বর থেকেই ভুগতে হবে তীব্র শ্বাসকষ্টে, তা নিয়ে অন্তত কোনও দ্বিমত নেই রাজধানীর বাসিন্দাদের।