ফাইল চিত্র।
৩১ অগস্ট, ২০১৯। প্রকাশ পেল বহু প্রতীক্ষিত এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা। উত্তেজনা, আশঙ্কায় টালমাটাল অসম। রাস্তায় আধাসেনার টহল। টিভিতে চোখ সেঁটে নিজের ভবিষ্যৎ, রাজ্যের ভবিষ্যৎ জানতে উদ্গ্রীব অসমবাসী। নাম বাদ পড়ল ১৯,০৬,৬৫৭ জনের। অসম পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হল আন্দোলন।
পরের চারটে মাস কেটেছে চরম আশঙ্কায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল ১২০ দিনের মধ্যে নাম বাদ পড়ার আবেদন জানাতে হবে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে। নিযুক্ত হন নতুন ২২১ জন ফরেনার্স ট্রাইবুনাল সদস্য। কিন্তু প্রথমে এনআরসি দফতরের অভিভাবকহীনতা, পরে সফটওয়্যারে ত্রুটি এবং কফিনে শেষ পেরেক করোনা ও লকডাউন। নিট ফল, এনআরসি প্রকাশের পরে এক বছরে এক পা-ও এগোয়নি কাজ। উল্টে এনআরসি তামাদি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এনআরসি দফতর সূত্রে খবর, স্পিকিং অর্ডার ডিজিটাইজ় করার সময় বড় ধরনের গরমিল চোখে পড়ে। তাই সব অর্ডার রি-ভেরিফিকেশনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হাজার তিনেক সরকারি কর্মী রিজেকশন অর্ডার তৈরির কাজ করছিলেন। করোনায় তাঁদের কাজ বন্ধ। অবশ্য আনলক ৪.০-এ সেপ্টেম্বর থেকে ফের জোর কদমে রিজেকশন লেটার তৈরি ও পাঠানোর কাজ শুরু করার জন্য জেলাশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘রিজেকশন লেটার’ তৈরির আগে সার্কল অফিসারেরা নাম বাদ পড়ার কারণগুলি ফের খতিয়ে দেখবেন৷
এনআরসির রাজ্য সমন্বয়রক্ষক হিতেশ দেবশর্মা জানান, করোনা অতিমারি ও বন্যার দরুন সরকারি কর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ও সেপ্টেম্বর সরকারি কাজকর্ম শুরু হলেই এনআরসির কাজও শুরু হবে৷
এ দিকে এক বছর ধরে দুই শতাধিক ফরেনার্স ট্রাইবুনাল সদস্য খামকা বেতন পাওয়ায় তাঁদের চুক্তি নবীকরণ হবে কি না— তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু এনআরসি দফতর দ্রুত রিজেকশন লেটার দেওয়ার কাজ শুরু করতে চায় বলে জানানোয় মত বদলেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণ জানান, আগামী মাসে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল সদস্যদের চুক্তি নবীকরণ হবে।
অবশ্য যে সংগঠনের মামলার জেরে সুপ্রিম কোর্ট এনআরসি নবীকরণের নির্দেশ দিয়েছিল, সেই অসম পাবলিক ওয়ার্কস জানিয়েছে, তারা এই এনআরসি মানবে না। সংগঠনের সভাপতি অভিজিৎ শর্মা বলেন, “এই এনআরসিতে ঘোষিত বাংলাদেশি, জেহাদি হিসেবে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। রাজ্যকে বিদেশিমুক্ত করতে এনআরসি তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান এনআরসিতে হাজার হাজার অবৈধ নাগরিকের নাম ঢুকেছে। তাই ১০০ শতাংশ রি-ভেরিফিকেশন না-হলে এই এনআরসি মূল্যহীন কাগজের টুকরো বৈ কিছুই নয়।” প্রাক্তন এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার দুর্নীতি ও কর্তব্যে গাফিলতি নিয়ে সরব হয়ে এনআরসি প্রক্রিয়ার সিবিআই তদন্তও দাবি করছে তারা। একই কথা রাজ্যও সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে। রাজ্যের মুখপাত্র হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, রাজ্য ১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ করে নতুন করে এনআরসি তৈরি করতে চায়।
এর মধ্যেই নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিল পাশ হয়েছে। ফলে হিন্দুদের ক্ষেত্রে কার্যত ২০১৪ সাল ভিত্তিবর্ষ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি অসম চুক্তির ছয় নম্বর দফা রূপায়ণ কমিটি সুপারিশ করেছে, ভূমিপুত্র অসমিয়া ও জনজাতি চিহ্নিতকরণে ভিত্তিবর্ষ হতে হবে ১৯৫১।
আসুর সাধারণ সম্পাদক লুরিনজ্যোতি গগৈ বলেন, ‘‘অসমবাসীর কাছে স্পষ্ট যে, সরকার অসমের ভূমিপুত্রদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চায় না।’’ কংগ্রেসের মতে, ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে কেন্দ্র বা রাজ্য এনআরসি নিয়ে এগোবে না। কারণ, নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী, এনআরসি ও অসম চুক্তির ষষ্ঠ দফা— এই তিন খুড়োর কল ঝুলিয়ে হিন্দু, মুসলিম ও ভূমিপুত্রদের ভোট হাতে রাখতে চাইছে বিজেপি।