ফাইল চিত্র।
প্রতি বছর এই সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় আর দরাদরিতে গমগম করে এই ফল-বাজার। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সেই বাজার এখন যেন ঝিমোচ্ছে। ক্রেতারা তো নেই, উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসা করতে আসা ফল বিক্রেতারাও যেন হারিয়ে গিয়েছেন। উত্তর কাশ্মীরের সোপোরের বিশাল ফল-পট্টি বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির অপেক্ষায় যেন প্রহর গুনছে।
৪৭ দিন অতিক্রান্ত। এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি উপত্যকার জনজীবন। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের সিদ্ধান্তের পর থেকে বাসিন্দাদের অনেকেই ব্যবসায়িক ক্ষতি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। সোপোরের ফল-বাজার যেন তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই বাজার থেকে এক কোটি ৯৪ লক্ষ বাক্স আপেল রফতানি হয়েছিল। এ বছর সেই সংখ্যাটা কোন তলানিতে ঠেকবে, তার হিসেব করতে গিয়েই শিউরে উঠছেন ব্যবসায়ীরা। এমনিতে, কাশ্মীর থেকে ২২ লক্ষ মেট্রিক টন আপেল রফতানি হয় প্রতি বছর। কম করে সাত লক্ষ মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এ বার অনেকেই ক্ষতির ভয়ে বাগান থেকে ফলই তুলছেন না। মূলত কিছু বিশেষ প্রজাতির আপেল এবং ন্যাশপাতি। যা দ্রুত পচনশীল।
দীর্ঘ দিন এই ফল বাজারের সঙ্গে যুক্ত খাজ়ির মহম্মদ আলি জানালেন, দক্ষিণ কাশ্মীর বিশেষত শোপিয়ানের মতো এলাকা থেকে প্রচুর ফল আসত। বিধিনিষেধ আর নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়িতে ট্রাক সোপোরে পৌঁছতে পারছে না। ফল-পট্টির ব্যবসায়ী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাজ়ির বাবা বলেন, ‘গত বছর বাংলাদেশ, ভুটান-সহ প্রায় ৯০টি এলাকা থেকে ক্রেতারা এসেছিলেন। কিন্তু এ বার কাশ্মীরের অন্য প্রান্ত থেকেই ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না।’’ বাজারে একটি হেল্প ডেস্ক খোলা হলেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সেখানে কোনও সরকারি আধিকারিককে দেখা মেলেনি।
একটানা ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকাও ক্ষতির বড় কারণ বলে জানালেন আব্দুল গফর নামে সোপোরের এক ব্যবসায়ী। তাঁর কথায়, ‘‘বাজার থেকে ফল বেরিয়ে গেলে, আমাদের জিনিসের সঙ্গে কী হচ্ছে, তা আমরা জানতে পারছি না। তাই ট্রাক খোয়া গেলে আমাদের আরও বড় লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’’
এক সময় যে ফল-পট্টি থেকে প্রতিদিন সারি সারি ট্রাক বার হত, এখন সেখানে একটা-দু’টো ট্রাকের আনাগোনা। প্রায় জনশূন্য বাজারে ঘোরাফেরা করছে কয়েকটা কুকুর।