রাফাল যুদ্ধবিমান। ছবি- সংগৃহীত।
চাপানউতোর চলছিল সমানে। তারই মধ্যে রাফাল বিতর্ক আজ আরও অনেকটা উস্কে দিল একটি খবর। সেটি হচ্ছে, ফ্রান্স তার দেশের দাসো অ্যাভিয়েশনের কাছ থেকে ২৮টি ‘আপগ্রেডেড’ রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে। প্রতিটির দাম পড়ছে ৮.২ কোটি ইউরো। নোভিটাইমস-এর এই খবরের সূত্র ধরে মোদী-জমানার রাফাল চুক্তির সঙ্গে তুলনা টানছেন অনেকে। অশোক সোয়াইন নামে এক জন যেমন টুইটে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ওই দাসোর কাছ থেকেই ভারত ৩৬টি রাফাল কিনছে ৭৮০ কোটি ইউরোয়। প্রতিটি বিমানের দাম পড়ছে প্রায় ২১.৬ কোটি ইউরো। এর সঙ্গে অশোকের টিপ্পনি, ‘‘ভারত মাতা কি জয়, অনিল অম্বানী কি জয়!’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধে এ নিয়ে ধারালো টুইট করেছে কংগ্রেসও। সিএজি এ দিন জানিয়েছে, তথ্যের অধিকার আইনেও তারা রাফাল নিয়ে তথ্য জানাতে রাজি নয় এই মুহূর্তে। কারণ, হিসেব এখনও চলছে।
কিন্তু ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তির যে হিসেব জানা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট, ভারত তাদের চেয়ে প্রতিটি রাফালের জন্য ১৩.৪ কোটি ইউরো বেশি দিচ্ছে। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় এগারোশো কোটি টাকার কাছাকাছি। ৩৬টি বিমানের জন্য রাজকোষ থেকে বেশি খরচ হচ্ছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
প্রশ্ন উঠেছে বিমানের মান ও দাম নিয়েও। ১৪ জানুয়ারি দাসোর সঙ্গে ইমানুয়েল মাকরঁ-র সরকার ২০০ কোটি ইউরোর চুক্তি করেছে ২৮টি এফ-৪ সংস্করণের রাফাল কিনতে। টুইটে সাংবাদিক রবি নায়ারের অভিযোগ, মোদী সরকার কিনছে আগের সংস্করণ অর্থাৎ এফ-৩ রাফাল বিমান। তা-ও দ্বিগুণ দাম দিয়ে।
আরও পড়ুন: বর্মার তথ্য জানানোর দাবি খড়্গের
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত অবশ্য নয়াদিল্লিতে জানিয়েছেন, গত কাল কোনও চুক্তি হয়নি। ২৮টি বিমানের জন্য চুক্তি হয়েছিল আগেই। এখন যে অর্থের কথা বলা হচ্ছে তার পুরোটাই খরচ হবে ‘ডেলিভারি’ না হওয়া ২৮টি রাফালকে এফ-৪ স্তরে উন্নীত করার জন্য।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন গোড়া থেকেই বেশি দামের প্রশ্নে যুক্তি দিয়েছেন, ভারত ওই বিমান কিনছে যুদ্ধের সাজসরঞ্জাম ও অন্য বেশ কিছু পরিষেবা-সহ। যার বিস্তারিত তথ্য নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার জানাতে রাজি নয়। কিন্তু ওই সব খাতে খরচের হিসেব না জেনেই বাড়তি দাম নিয়ে অকারণ জলঘোলা করা হচ্ছে। আজও অরুণ ও নির্মলার যুক্তিকেই অভিযোগ খণ্ডনের হাতিয়ার করে বিজেপি। যদিও বিতর্ক তাতে থামছে না।
ফ্রান্সের সরকার ও দাসোর মধ্যে চুক্তির খবরটি সামনে আসার পরে কংগ্রেস আজ টুইট করেছে, ‘‘৩৬টি রাফাল বিমানের জন্য ভারত দিচ্ছে ৭৮০ কোটি ইউরো। ২৮টি রাফালের জন্য ফ্রান্সের খরচ পড়ছে ২০০ কোটি ইউরো। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সব ডিগ্রির মালিকটি কি হিসেবটা কষে দেখাবেন?’’ এই টুইটের হ্যাশ ট্যাগ ‘চৌকিদারচোরহ্যায়নেভিটাইমস’।
সরকার সুপ্রিম কোর্টকে রাফালের দাম ও অন্যান্য তথ্য দিয়েছিল বন্ধ খামে। সাংসদেরাও সব তথ্য পাননি এখনও। এই পরিস্থিতিতে তথ্যের অধিকার আইনে সিএজি-র কাছে রাফাল চুক্তির তথ্য চেয়েছিলেন পুণের বিহার দুর্বে। জবাবে সিএজি আজ জানিয়েছে, ‘‘এখনও অডিট চলছে। মাঝপথে তথ্য জানানো যাবে না। তাতে সংসদের অধিকারকে লঙ্ঘন করা হবে।’’ রাফালের বেশি দাম ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালকে বঞ্চিত করে বরাতের ‘অফশোর পার্টনার’ হিসেবে মোদী-ঘনিষ্ঠ অনিল অম্বানীকে বেছে নেওয়া নিয়ে ক’মাস ধরেই মুখর রয়েছেন রাহুল গাঁধী। এটিকে কার্যত আগামী লোকসভা ভোটের অন্যতম হাতিয়ার করতে বদ্ধপরিকর কংগ্রেস সভাপতি। রাফাল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ার দাবিতে সমানে চাপ দিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস। মোদী সরকার সে পথে হাঁটতে রাজি নয়। এরই মধ্যে রাফাল নিয়ে নতুন করে তরজা শুরু হওয়ায় বিড়ম্বনা বাড়ল সরকারের।