ফরাসি রাষ্ট্রদূত ইমানুয়েল লেন্যাঁ।
বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চিনের প্রভাব কমাতে ফ্রান্সের ভরসা এখন ভারত। সোমবার কলকাতায় এক আলাপচারিতায় ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ইমানুয়েল লেন্যাঁ তা কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বা ভারত মহাসাগর-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্ষেত্রে ভারত ও ফ্রান্স একযোগে শীঘ্রই কিছু উন্নয়ন প্রকল্প, ঘোষণা করতে পারে বলে ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন।
ইমানুয়েলের দাবি, ২২ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে অতিথি হিসেবে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের যাওয়ার কথা। সেখানেই কিছু নির্দিষ্ট ঘোষণা হতে পারে। ফরাসি রাষ্ট্রদূতের কথায়, “একটা বড় সমস্যা হল, চিন তাদের আর্থিক শক্তি কাজে লাগিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কয়েকটি দেশকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। শ্রীলঙ্কা এবং আরও কয়েকটি দেশে এমন দেখা যাচ্ছে। ওই তল্লাটে একটা বিকল্প মেলে ধরতেই আমরা ভারতকে পাশে চাই। প্যারিসে আমাদের দু’দেশের তরফে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য কিছু উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করা হতে পারে।”
বাস্তবিক সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন পড়শি দেশে চিনের নানা ধরনের সহযোগিতামূলক প্রকল্পে খানিকটা শঙ্কার মেঘ দেখেছেন দিল্লির কূটনীতিকেরাও। ফরাসি রাষ্ট্রদূত এ দিন স্পষ্ট বলেন, “ফ্রান্সের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে ভারত।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ভারত ফ্রান্সের বহু বছরের বন্ধু দেশ। আগামী ৫০ বছরেও এই সম্পর্ক অটুট থাকার বুনিয়াদ শক্ত। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন ইত্যাদি নানা বিষয়ে সমমনস্ক দেশ হিসেবে ভারত ফ্রান্সের সব থেকে পছন্দের তালিকায়।’’
এ বছর এপ্রিলে ফরাসি প্রেসিডেন্টের ইমানুয়েল মাকরঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই ভারতের সঙ্গে প্যারিস একযোগে পদক্ষেপ করতে চায় বলে এ দিন ইঙ্গিত মিলেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে পরিবেশবন্ধু কোনও প্রকল্পে হাত দেওয়া ছাড়াও জলপথের সুরক্ষা, টহলদারি, তথ্য আদানপ্রদানেও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও মজবুত করতে চায় ফ্রান্স।
অতিমারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আরও স্বনির্ভর হওয়ার তাগিদেও ভারতকে শরিক হিসেবে দেখছে ফ্রান্স। ইমানুয়েল বলেন, “চিকিৎসার সরঞ্জাম, উপকরণ ইত্যাদি তৈরি করার জন্য ইউরোপের বাইরে ভারতই আমাদের বিশেষ পছন্দ।”
অর্থনৈতিক থেকে সামরিক নানা ক্ষেত্রে ফ্রান্স-ভারতের সহযোগিতার সম্পর্ক প্রায় ৭০ বছরের পুরনো। রাফালের পরে নতুন যুদ্ধবিমান ভারতে সরবরাহের প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। তা রূপায়ণে প্যারিস আশাবাদী বলে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন। ব্রেক্সিট-উত্তর ইউরোপে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থার লগ্নির জন্যও ফ্রান্সই উপযুক্ততম জায়গা বলে ইমানুয়েলের দাবি। এ দিন কলকাতায় কয়েকটি বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেন।