কেমন খরা? নিয়মই কাঁটা রাজ্যগুলির

বৃষ্টির ঘাটতির আশঙ্কায় দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় খরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০২:৪৭
Share:

ছবি: এএফপি।

বৃষ্টির অভাবে চাষের জমি ফুটিফাটা। বৃষ্টির অপেক্ষায় হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য। তীব্র জলসঙ্কট। ট্যাঙ্কারে জল পাঠাতে হচ্ছে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ, মরাঠাওয়াড়ায়। কিন্তু খরা কবলিত এলাকার জন্য সাহায্য চাইতে কেন্দ্রীয় সরকারের দরবারে এসে হোঁচট খাচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রীরা। প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে, কতটা খরা? মারাত্মক? মাঝারি? নাকি স্বাভাবিক?

Advertisement

বৃষ্টির ঘাটতির আশঙ্কায় দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় খরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু মোদী সরকারের কৃষি মন্ত্রক খরা কবলিত এলাকার মাপকাঠিই বদলে ফেলেছে। ২০১৬-য় তৈরি কৃষি মন্ত্রকের খরা মোকাবিলার নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনও রাজ্যে খরা মারাত্মক চেহারা নিলে তবেই কেন্দ্রীয় সাহায্য মিলবে। বৃষ্টির ঘাটতি, কৃষিতে সঙ্কট, মাটিতে জলের অভাব, হাইড্রোলজি, ফসলের স্বাস্থ্য— এই পাঁচটির মধ্যে অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে তবেই খরার চেহারা মারাত্মক বলা যাবে।

নিয়মের ফাঁকে রাজ্যকে অর্থসাহায্য এড়িয়ে গেলেও কৃষি মন্ত্রকের কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। দেশের অর্ধেক এলাকা খরার কবলে পড়লে কৃষিতে বৃদ্ধি কমবে। কমবে আর্থিক বৃদ্ধির হারও। সর্বোপরি নরেন্দ্র মোদীর ২০২২-এর মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ধাক্কা খাবে। ফের চাষিদের বিক্ষোভ শুরু হতে পারে।

Advertisement

রাজস্থান, কর্নাটক, অন্ধ্রের মতো রাজ্যে ভোট অনেক দেরিতে। কিন্তু বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে চলতি বছরেই বিধানসভা ভোট। লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রের লাতুরে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোদী নতুন ভোটারদের কাছে বালাকোটের জওয়ানদের প্রথম ভোট উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে ৪৮টি লোকসভা কেন্দ্রের ৪১টিই এনডিএ দখল করেছে। কিন্তু বিধানসভা ভোটে মহারাষ্ট্রের খরা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকার।

মহারাষ্ট্রে যখন বিজেপি আক্রমণের মুখে, কর্নাটকে তখন আবার বিজেপি খরা নিয়েই এইচ ডি কুমারস্বামীর সরকারকে নিশানা করতে চাইছে। রাজ্যের ৮০ শতাংশ এলাকা খরা কবলিত হলেও কেন্দ্রীয় সাহায্য মিলবে না বুঝে কুমারস্বামী কেন্দ্রের কাছে দাবি তুলেছেন, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ২ হাজার কোটি টাকা বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হোক।

ফডণবীস বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে এসে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করেছেন। রাজ্যের ৩৬টি জেলার মধ্যে ৩২টি জেলাকেই খরা কবলিত বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। আজ ফিরে গিয়ে এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এনসিপি ১০ জুন দলের প্রতিষ্ঠা দিবসকে জল সঙ্কট তুলে ধরার কাজে ব্যবহার করবে। কংগ্রেসও খরার মোকাবিলায় বিজেপি সরকার ব্যর্থ বলে প্রচারে নেমেছে। এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার বলেন, ‘‘সরকার গবাদি পশুর খাবার বিলির শিবির খুলেছে। কিন্তু ট্যাঙ্কারে করে সব জায়গায় জল পৌঁছচ্ছে না।’’

কৃষকসভার মহারাষ্ট্রের নেতা অজিত নওয়ালে বলেন, ‘‘জলের অভাবে চাষিরা খারিফের বীজ বুনতে পারছেন না। গবাদি পশুদের খাবার, জল নেই। দুধের দামে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছিল। ভোট মিটতেই তা বন্ধ। এর পর চাষিরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?’’ এর ফল কি ভোটে পড়বে?

নওয়ালের হতাশ স্বরে জবাব, ‘‘চাষিদের সমস্যা, কাজের অভাব আর ভোটের প্রসঙ্গ হচ্ছে কোথায়? বিজেপি জাতীয়তাবাদ ও বিভাজনের রাজনীতি করে লোকসভা ভোটে জিতে গেল। প্রধান বিরোধীরাও এখানে দুর্বল। বিজেপি লোকসভা ভোটের হাওয়াতেই বিধানসভাও জিতে নিতে চাইবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement