পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর পুলকিত আর্য(ডান দিকে)। ছবি পিটিআই।
অঙ্কিতা ভাণ্ডারী খুনের মূল অভিযুক্ত পুলকিতকে ‘সাদাসিধে বালক’ বলে দাবি করেছিলেন তাঁর বাবা তথা বিজেপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা বিনোদ আর্য। তাঁর ‘সাদাসিধে’ ছেলের নির্দেশে রিসর্টে কী ধরনের কুকীর্তি চলত, তা প্রকাশ্যে এনেছেন ওই রিসর্টেরই এক প্রাক্তন কর্মী এবং তাঁর স্বামী। তাঁদের অভিযোগ, হৃষীকেশের ‘বনত্র’ রিসর্টে মাদক, দেহব্যবসা কিছুই বাদ ছিল না। এই সব অপকর্মের মূল হোতাই ছিলেন পুলকিত।
পুলকিতের ‘বনত্র’ রিসর্টে রিসেপশনিস্টের চাকরি করতেন ঋষিতা নামে এক তরুণী। গত অগস্টে অঙ্কিতা কাজে যোগ দেওয়ার আগেই তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘‘ওই রিসর্টের (বনত্র) ম্যানেজার মদ, গাঁজা-সহ বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করতেন। এমনকি, ভিআইপি অতিথিদের জন্য রিসর্টে মেয়েদের আনা হত।’’
পুলকিত এবং রিসর্টের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা অঙ্কিতাকে যৌনপেশায় রাজি হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ঋষিতার অভিযোগ, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, আমাকেও ওরা ওই পেশায় নিয়ে যেতে চায়।’’ তাঁর অভিযোগ, পুলকিত এবং আর এক অভিযুক্ত অঙ্কিত গুপ্ত রিসর্টের কর্মরত মেয়েদের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করতেন। রিসর্টের অসহনীয় পরিস্থিতির কারণেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
ওই রিসর্টেই হাউসকিপারের কাজ করতেন ঋষিতার স্বামী বিবেক। সেখানে তাঁর অভিজ্ঞতাও অত্যন্ত তিক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে এক মাস কাজ করার পরেই কুকর্মগুলি জানতে পারি এবং কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিই। সপ্তাহখানেক পরে পুলকিত এবং রিসর্টের ম্যানেজার আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, কোনও খারাপ কাজ হবে না।’’ বিবেক বলতে থাকেন, ‘‘কিন্তু কোথায় কী! কয়েক দিন বাদেই পুলকিত রিসর্টে মাদক এবং দেহ ব্যবসার কারবার শুরু করে দিল।’’ তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি। উপরন্তু বিবেককে ‘চোর’ অপবাদ দিয়ে হেনস্থা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এমনকি, জোর করে ক্ষমা চাইয়ে তাঁকে দিয়ে চিঠি লিখিয়েছিলেন পুলকিত ও তাঁর লোকজন। ওই চিঠি দেখিয়ে দিনের পর দিন বিবেকদের ব্ল্যাকমেল করা হত।
পুলকিতের রিসর্টে আজ তদন্তে যান বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্য এবং ফরেন্সিক আধিকারিকেরা। সেখানে তাঁরা বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন বলে খবর।
গত কালের পরে আজও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব অঙ্কিতার মা সোনি দেবী। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মেয়েটাকে দাহ করার জন্য প্রশাসনের এত তাড়াহুড়ো করার কী দরকার ছিল? এক মায়ের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।’’ তাঁর আশঙ্কা প্রশাসনের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় বিপাকে পড়তে হতে পারে তাঁর ছেলেকেও।