মনমোহন সিংহ। ফাইল চিত্র।
কয়লা কেলেঙ্কারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নাম বাদ দেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ সঞ্জয় নিরুপম— সাত বছর আগে সংবাদমাধ্যমে এমনই দাবি করেছিলেন প্রাক্তন কনট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) বিনোদ রাই। এর পরেই ওই মন্তব্যের জন্য বিনোদ রাইয়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন সঞ্জয়। এ দিন ওই মন্তব্যের জন্য কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপমের কাছে ‘নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা’ করে হলফনামা দিলেন দেশের প্রাক্তন সিএজি।
কংগ্রেসের নেতারা সঞ্জয় নিরুপমকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি দাবি তুললেন, মনমোহন সিংহের নামে মিথ্যে কথা বলার জন্য দেশের কাছে ক্ষমা চান বিনোদ রাই। কোন রাজনৈতিক দলের সুবিধা করতে তিনি ওই ভাবে মিথ্যে বলেছিলেন, তা-ও জানানোর দাবি তুলতে থাকেন কংগ্রেস নেতারা। কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘বিনোদ রাই একজন ঠগ। যিনি নিজের বই বিক্রির জন্য সঞ্জয় নিরুপমের নাম করে মিথ্যে কথা বলে আজ ক্ষমা চাইছেন, ভেবে দেখুন, তিনি নিজের সেই বইয়ে এবং সিএজি রিপোর্টে কত মিথ্যে বলেছেন?’’ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার বক্তব্য, ‘সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মনমোহন সিংহ এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে যে নির্জলা মিথ্যে প্রচার হয়েছিল, তা ফাঁস হয়ে গেল এই হলফনামায়। সঞ্জয়কে কুর্নিশ।’
চাপের মুখে বিজেপি নেতাদের মুখে কুলুপ। অনেকেই পরোক্ষে দায় ঝেড়ে বলছেন, বিনোদ মিথ্যে বলেছিলেন, ক্ষমা চেয়েছেন। এর মধ্যে বিজেপি কোথায়! কিন্তু কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি এবং সঙ্ঘের ইশারাতেই বিনোদ রাই তাঁর সিএজি-রিপোর্টে অভিযোগ করেছিলেন, মনমোহন সিংহের জমানায় কয়লা-কাণ্ডে দুর্নীতির জেরে দেশের রাজকোষের কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে মনমোহন জমানায় টু-জি স্পেকট্রাম বিলিতেও বিপুল টাকা ক্ষতির কথা জানিয়েছিলেন তিনি। যে রিপোর্টকে কেন্দ্র করে ইউপিএ-সরকারের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ এনে দিল্লির বুকে ‘ইন্ডিয়া এগেনস্ট করাপশন’ আন্দোলন শুরু করেন অন্না হজারে-কিরণ বেদী-অরবিন্দ কেজরীবালরা। ওই আন্দোলনে সমর্থন ছিল আরএসএস তথা বিজেপির। সেই আন্দোলনে ভর করে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। পরের বছর দিল্লিতে ক্ষমতায় আসে আম আদমি পার্টি। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শীতঘুমে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের মুখ অন্না এবং কেজরীবালের দল বিজেপির বি-টিম। এদের সকলের উচিত মনমোহনের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
মনমোহন সিংহ তখন বলেছিলেন, তিনি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেননি। বলেছিলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, ইতিহাস আমার প্রতি সদয় হবে।’’ মোদী জমানার প্রাক্তন কয়লা সচিব অনিল স্বরূপ বলেন, ‘‘বিনোদ রাইকে অনেকগুলো ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তার মধ্যে একটি তিনি করেছেন।’’