বেকসুর লালু নন, ভুল ভাঙল দ্রুতই

এজলাসের ভিতর থেকে এক জন এসে জানালেন লালুপ্রসাদকে বেকসুর খালাস করেছে আদালত। আনন্দে ফেটে পড়লেন লালুর সমর্থকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাঁচী ও পটনা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৯
Share:

লালুপ্রসাদ যাদব।

ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল সাড়ে তিনটে। সিবিআই কোর্ট চত্বরের সামনে হাজার হাজার লালু-সমর্থকের ভিড়। এজলাসের ভিতর থেকে এক জন এসে জানালেন লালুপ্রসাদকে বেকসুর খালাস করেছে আদালত। আনন্দে ফেটে পড়লেন লালুর সমর্থকরা। কেউ কেউ সোশ্যাল মি়ডিয়ায় লালুর বেকসুর খালাসের খবর আপলোড করে ফেললেন। অনেকেই হাত তুলে ‘ভি ফর ভিক্ট্রি’ দেখাতে শুরু করেছিলেন। তবে ভুলটা ভাঙল মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই। বেকসুর খালাস হয়েছেন বিহারের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, জগন্নাথ মিশ্র-সহ কয়েক জন। আর দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন লালুপ্রসাদ।

Advertisement

নিমেষে কোর্ট চত্বরে নেমে এল শ্মশানের নীরবতা। সমর্থকরা জানতে পারলেন, সাজা শোনানো হবে ৩ জানুয়ারি। তত দিন তাঁদের নেতার ঠিকানা রাঁচীর বিরসা মুন্ডা জেল।

খবরটা রাঁচী থেকে পটনা পৌঁছতেও সময় নিয়েছে কয়েক লহমা। স্তব্ধতা নেমে আসে পটনার ১০ সার্কুলার রোডে, যাদব-পরিবারের বাসভবনে। আরজেডি সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশ শুনেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন লালু-ঘরণী রাবড়ী দেবী। শুধু তো গৃহকর্তার জেলে যাওয়ার খবর নয়, এ দিনই বাড়ির বড় মেয়ে তথা সাংসদ মিসা ভারতীর বিরুদ্ধেও বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় দিল্লিতে চার্জশিট দাখিল করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। যাদব-পরিবারের তরফে কেউই রাত পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসেননি। তবে রাঁচী থেকে ফোনে লালুপ্রসাদের ঘোষিত উত্তরাধিকারী তেজস্বী যাদব বলেন, “এ ভাবে আমাদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। বিহারের মানুষই এই ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে।”

Advertisement

তবে যাঁকে ঘিরে এত টানাপড়েন, সেই লালুপ্রসাদ কিন্তু এ দিনও নিজস্ব মেজাজেই উদ্বেগ চেপে রেখেছিলেন। সকাল সাড়ে দশটাতেই ছেলে তেজস্বীকে নিয়ে তিনি রাঁচীর একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন। তবে বেরোনোর পরেই তাঁর আইনজীবীর ফোন আসে, বেলা তিনটেয় রায় শোনাবেন বিচারক। গাড়ি ঘুরিয়ে হোটেলে ফেরত আসেন লালু। বেরোন পৌনে তিনটে নাগাদ। এজলাসে ঢোকার আগে সমর্থকদের তিনি বলে যান, “বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। রায় যা-ই হোক না কেন, শান্তি যেন বজায় রাখা হয়।’’

তিনটে নাগাদ এজলাসে আসেন বিচারক শিবপাল সিংহ। প্রথমে জগন্নাথ মিশ্রদের খালাসের রায় শোনান। এর পর লালুর রায় দিতে বিচারক সময় নেন মাত্র পনেরো মিনিট। লালুর আইনজীবী আবেদন করেন, লালুকে বেকসুর খালাস করা হোক। বিচারক পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কোন যুক্তিতে লালুকে খালাস করা যাবে বলতে পারেন?’’ এর পরেই দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাঁকে।

আদালত থেকে জেলের পথে লালুর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন কিছু সমর্থক। নেতার নামে জিন্দাবাদ ধ্বনি ওঠে। পুলিশের সঙ্গে সমর্থকদের খানিকটা ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশের পরিত্রাতা হিসেবে এগিয়ে আসেন সেই লালুপ্রসাদই। তাঁর ইশারায় সমর্থকরা পথ করে দেন কনভয়ের।

নেতার জেলবন্দি হওয়ার খবর আসার পর পটনায় আরজেডি সদর দফতরও খালি হয়ে যায়। আজ সকাল থেকেই রাজ্যে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে রাত পর্যন্ত কোনও গোলমালের খবর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement