(বাঁ দিকে) গৌতম আদানি। জগন্মোহন রেড্ডি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আমেরিকার আদালতে ‘প্রমাণ-সহ অভিযোগপত্র’ (ইনডিক্টমেন্ট) জমা পড়েছে গত ২০ নভেম্বর। ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গৌতম আদানি এবং তাঁর ভাইপো সাগর-সহ সাত জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাতে। অভিযোগ, বাজারের থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেতে বছর কয়েক আগে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের (যার মধ্যে মন্ত্রী এবং জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন) ঘুষ দিয়েছিলেন আদানিরা। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ উঠেছে অন্ধ্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান জগন্মোহন রেড্ডির বিরুদ্ধে।
এই আবহে জগন্মমোহন শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগপত্রে আমার নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। যা কিছু বলা হচ্ছে, সবই গুজব। এবং আমি যতটুকু জেনেছি, গৌতম আদানির সঙ্গে আমার দেখা করার বিষয়টি ছাড়া আর কোথাও আমার নাম উল্লেখ করা হয়নি।’’
প্রসঙ্গত, নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ডিসট্রিক্ট আদালতে আমেরিকার বিচার বিভাগ এবং শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি (সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) ইনডিক্টমেন্ট জমা দিয়ে দাবি করেছে ২৬.৫ কোটি ডলার বা (প্রায় ২২৩৭ কোটি টাকা) ঘুষ দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাজারের থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বেচার বরাত আদায় করেছিলেন আদানি। তবে জগনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ভাবে ঘুষ নেওয়ার কোনও অভিযোগ তোলা হয়নি। শুধু আদানিরা নয়, তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার দেশের প্রথম সারির অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আইন মেনে বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি করেছিল বলেও জানান জগন।
অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (সেকি) এবং অন্ধ্রের সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মধ্যে মউ (সমঝোতাপত্র) স্বাক্ষরের জন্য ১৭৫০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন আদানি। অভিযোগ মোতাবেক, ২০২১ সালের অগস্ট মাসে অন্ধ্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জগনের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য দেখাও করেছিলেন আদানি। তার পরেই নাকি ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে অন্ধ্রের সরকারি সংস্থার সঙ্গে সোলার এনার্জি কর্পোরেশনের সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
অভিযোগ, ঘুষ দিয়ে বরাত আদায়ের তথ্য গোপন রেখে এই প্রকল্পের জন্য আদানি গ্রিন সংস্থা ঋণপত্রের (বন্ড) মাধ্যমে লগ্নিকারীদের থেকে ৭৫ কোটি ডলার (প্রায় ৬৩৩৮ কোটি টাকা) ঘরে তুলেছিল। এর মধ্যে আমেরিকার লগ্নিকারীদের থেকে ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার তোলা হয়েছিল। তাঁরা আমেরিকার সহযোগী সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সে দেশের লগ্নিকারীদের থেকে টাকা তুলছিলেন। অন্য দিকে, সেই টাকায় ঘুষ দিচ্ছিলেন। আমেরিকার আইন অনুযায়ী কোনও সংস্থা আমেরিকার শেয়ার বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে তাঁরা সে দেশের সমস্ত আইন মেনে চলতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে আদানিরা ঘুষের টাকার একাংশ আমেরিকার বাজার থেকে সংগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ, যা বেআইনি। ফলে দায়ের হয়েছে মামলা। তবে বৃহস্পতিবার আদানি গোষ্ঠী বিবৃতি দিয়ে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।