এই সেই রাইফেল। —নিজস্ব চিত্র।
যুদ্ধ বা জঙ্গিদমন নয়, চোরাশিকার রুখতে অসমের বনরক্ষীদের হাতে মারণাস্ত্র তুলে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ‘ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’-এর মাল্টি ক্যালিবার ‘ঘাতক’ রাইফেল এখনও হাতে পায়নি ওই অঞ্চলের সেনাবাহিনী, আধাসেনা বা পুলিশও। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, দেশের অন্য কোথাও বনরক্ষীদের হাতে এত আধুনিক অস্ত্র নেই।
কিন্তু কেন এমন মারণাস্ত্রের প্রয়োজন হল উত্তর-পূর্বের বনরক্ষীদের? বন দফতর সূত্রে খবর, আগে চোরাশিকারিদের সম্বল ছিল .৩০৩ বা .৩১৬ রাইফেল। এখন জঙ্গি মদতপুষ্ট শিকারিদের সঙ্গে থাকছে এ কে ৫৬, মার্কিন এম ১৬ রাইফেল। সিঙ্গল-শট, বোল্ট অ্যাকশন রাইফেল নিয়ে তাদের রুখতে পারছেন না বনরক্ষীরা। সেই সমস্যা কাটাতেই বনরক্ষীদের হাতে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অসম সরকার।
রাজ্যের বনমন্ত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম জানান, অনেক আলোচনার পরে ডিআরডিও-র তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের ইছাপুরে তৈরি ‘ঘাতক’ রাইফেল বনরক্ষীদের জন্য কেনার সিদ্ধান্ত হয়। তা ছাড়া কেনা হচ্ছে ইনসাস রাইফেলও।
অসমের প্রধান মুখ্য বনপাল বিকাশ ব্রহ্ম জানান, বন দফতর ২৭২টি ইনসাস, ৯৫৪টি সেল্ফ লোডিং রাইফেল, ৯১টি ‘ঘাতক’ রাইফেল, ২০টি ৯মিলিমিটার বোরের পিস্তল ও ১৩৩টি ১২ বোরের পাম্প অ্যাকশন গান কিনেছে। দফায়-দফায় অস্ত্রগুলি পাঠাচ্ছে ডিআরডিও।
‘ইছাপুর গান অ্যান্ড শেল’ কারখানার এক কর্তা জানান, দেশের কোথাও বনরক্ষী তো বটেই পুলিশের হাতেও এই রাইফেল যায়নি। এখনও পরীক্ষা ও উন্নতিসাধনের প্রক্রিয়ায় থাকা ‘ঘাতক’ আধাসেনা সীমিত সংখ্যায় ব্যবহার করছে।
ডিআরডিও-র তৈরি ওই রাইফেলের বিশেষত্ব হল— সেটি থেকে এ কে সিরিজ রাইফেলের মতো ৭.৬২ বোর ও ইনসাসের মতো ৫.৫৬ বোরের গুলি ছোঁড়া যায়। প্রথমটির মারণ ক্ষমতা এবং দ্বিতীয়টির জখম করার ক্ষমতা বেশি। ৩.০৮ কিলোগ্রাম ওজনের ওই রাইফেলের ম্যাগাজিনে ৩০টি গুলি থাকে। মিনিটে ৬০০ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া যায়। পাল্লা ৪০০ মিটার। সেনাবাহিনী অনেক দিন ধরেই মাল্টি-ক্যালিবার রাইফেলের দাবি করে আসছে। তবে ডিআরডিও-র ‘ঘাতক’ এখনও সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত ‘ফিল্ড টেস্টে’ উত্তীর্ণ হয়নি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ঘাতক’-এর প্রযুক্তি, নকশা, ব্যবহার সবই এ কে ৪৭ রাইফেলের মতোই। কিন্তু বনরক্ষীদের প্রশিক্ষণ হয় বোল্ট অ্যাকশন রাইফেলে। আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চালানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ লাগে। বন দফতর জানায়, রাইফেল হাতে মিললে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আপাতত অসম বন সুরক্ষা বাহিনীর প্রশাসনিক দিকটি বন দফতরের হাতে থাকলেও বাহিনীর প্রধান হন আইপিএস পদমর্যাদার কোনও অফিসারই। রাজ্য পুলিশের ডিজি মুকেশ সহায় জানান, অসম পুলিশের হাতে এ কে ৪৭ ও ইনসাস থাকলেও ‘ঘাতক’ নেই। বনমন্ত্রী জানান, বন দফতর অনেক চেষ্টা করলেও গত তিন বছরে রাজ্যের জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যগুলিতে শিকারিরা ৫২টি গন্ডার মেরেছে। ওই সময়ের মধ্যে বনরক্ষীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ৮ শিকারির। ৩১৬ জন চোরাশিকারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।