ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জরিফের সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।—ছবি পিটিআই।
চিনকে ঠেকাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা এবং সমুদ্রপথে উঠেপড়ে লেগেছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি ভারত-ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে নতুন করে পৌঁছনোর জন্যও ব্যগ্র মোদী সরকার।কারণ, সেখানেও চিন পৌঁছে যাচ্ছে বিরাট অর্থলগ্নির প্রস্তাব নিয়ে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে কয়েক দিনের ব্যবধানে দু’টি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক (প্রতিরক্ষা এবং বিদেশমন্ত্রক পর্যায়ে) নয়াদিল্লির সেই মনোভাবকে তুলে ধরছে।
দু’দিন আগেই মস্কো থেকে ফেরার পথে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তেহরানে দেখা করেছেন সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে। আর গত কাল মস্কো যাওয়ার পথে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মধ্যাহ্নভোজন-বৈঠক করলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জরিফের সঙ্গে, মন্ত্রকের প্রতিনিধিদল নিয়ে। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তান পরিস্থিতি, উপসাগরীয় অঞ্চলের সাম্প্রতিক অস্থিরতা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক যোগাযোগের পাশাপাশি ইরান নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় চিনের ভূমিকা নিয়েও। চিন নিয়ে ভারত তাদের যাবতীয় উদ্বেগের বার্তা দিয়েছে তেহরানকে।
ভারতের ইরানকে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী? চাবাহার প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রেলচুক্তি নিয়ে ভারত এবং ইরানের মধ্যে ডামাডোল চলছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের সঙ্গে রেলপ্রকল্প নিয়ে বিতর্ক হয়তো অনেকটাই মেটার পথে। কিন্তু ইরানের সঙ্গে চিনের নতুন বন্ধুত্ব নিয়ে যে বহুমাত্রিক আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা সহজে মেটার নয়। চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং তেহরান গিয়ে একটি মহাচুক্তি সেরেছেন। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা না হলেও সূত্রের দাবি, পঁচিশ বছরের এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আর্থিক মূল্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ইরানের মূল পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্র, ব্যাঙ্কিং, টেলিকম, রেল, মেট্রো, বন্দর, বিমানবন্দর-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এ বার হইহই করে ঢুকে যাবে চিন। বিনিময়ে চিন এবং ইউরোপের মধ্যে সংযোগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে ইরান।
এই পরিস্থিতিতে তেহরান-নীতিকে কী ভাবে নতুন করে সাজানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনাও চলছে বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর।
যদিও একই সঙ্গে সাউথ ব্লক সূত্রে বলা হচ্ছে, ইরান প্রশ্নে আমেরিকার রণংদেহী মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তেহরান-প্রেম দেখানো খুব সহজ হবে না নয়াদিল্লির পক্ষে। কিন্তু চিন প্রশ্নে এখন এতটাই মরিয়া সাউথ ব্লক যে দু’দিনের মধ্যে দু’টি শীর্ষ বৈঠক সেরে ফেলল তারা।