চলছে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের কাজ। ছবি: পিটিআই।
ব্রিটিশ ভারতের ফেডেরাল কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি মরিস গয়ার তৈরি করেছিলেন এর নীল নকশা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে রাষ্ট্রপতি ভবনের মধ্যেই ন্যাশনাল মিউজিয়াম চালু হয়। তার পর জনপথে ন্যাশনাল মিউজিয়ামের বর্তমান ভবনের শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ১৯৬০-এ রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ উদ্বোধন করেন এই মিউজিয়ামের। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রাজপথ ও তার দু’পাশের এলাকা ঢেলে সাজাতে গিয়ে এ বার সেই ন্যাশনাল মিউজিয়াম ভাঙা পড়তে চলেছে। ন্যাশনাল মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ভারতের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসের চিহ্ন, প্রায় ২ লক্ষ সামগ্রী সাজানো হবে নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লকে।
শুধু ন্যাশনাল মিউজিয়াম নয়। দেশের রাজধানী বলতেই যে সব ছবি ভেসে ওঠে, তার মধ্যে অন্তত এক ডজন ভবন, সরকারি দফতর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। মোদী সরকারের নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ন্যাশনাল মিউজিয়ামের পাশাপাশি ন্যাশনাল আর্কাইভের অ্যানেক্সি ভবন ও ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস ভেঙে ফেলা হবে। ন্যাশনাল আর্কাইভের আদি হেরিটেজ ভবন থাকবে। ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস আপাতত জনপথ হোটেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তার পর জামনগর হাউস চত্বরে নতুন ভবন তৈরি হলে সেখানেই এই সেন্টারের ঠিকানা হবে।
এ ছাড়া এখনও খাতায়কলমে সিদ্ধান্ত না হলেও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের খবর— কৃষি ভবন, শাস্ত্রী ভবন, নির্মাণ ভবন, জওহর ভবন, উদ্যোগ ভবন, শ্রমশক্তি ভবন, বিজ্ঞান ভবন, রক্ষা ভবনের মতো একাধিক সরকারি ভবন আগামী দিনে ভেঙে ফেলা হতে পারে। শেষের দু’টি ছাড়া বাকিগুলোতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক অবস্থিত।
কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, এই গোটা প্রক্রিয়াটাই অস্বচ্ছ। সরকারের কী পরিকল্পনা, কোন ঐতিহাসিক ভবন ভাঙা হবে, রাজপথের দুপাশে কত গাছ কাটা পড়বে,তার কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অবশ্য দাবি, প্রতিটি স্তরেই হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটি, পরিবেশ কমিটির ছাড়পত্র নেওয়া হচ্ছে। বিরোধীদের দাবি, সরকার একবারে গোটা পরিকল্পনা পেশ না করে বিচ্ছিন্ন ভাবে এক-একটি কাজের ছাড়পত্র আদায় করে নিচ্ছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে অতিমারির মধ্যে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ তকমাপ্রাপ্ত সেন্ট্রাল ভিস্টার কাজ এগোচ্ছে।
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী সংসদেই জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও হেরিটেজ ভবনে হাত পড়বে না। প্রায় একশো বছরের পুরনো বর্তমান সংসদ ভবন, রাইসিনা হিলসের উপরে নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লক মেরামত করা হবে। এখন নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, বিদেশ মন্ত্রক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, অর্থ মন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ঠিকানা। ভবিষ্যতে এই দু’টি ভবনেই ন্যাশনাল মিউজিয়াম তৈরি হবে।
স্বাধীনতার পরে কংগ্রেস সরকারের তৈরি ভবনগুলিকে যে তিনি ধর্তব্যের মধ্যে আনতে নারাজ, তা বুঝিয়ে দিয়ে পুরীর দাবি, ওই সব ভবন নিম্ন মানের। বর্তমানের সময়োপযোগী নয়। এই সব ভবন ভেঙে সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পে দশটি কেন্দ্রীয় সচিবালয় ভবন তৈরি হবে। সেখানেই সমস্ত মন্ত্রকের ঠিকানা হবে।
বিরোধীরা বলছেন, মোদী সরকার আসলে কংগ্রেস আমলে তৈরি কোনও ভবনকেই হেরিটেজ ভবন বলে মানতে নারাজ। প্রধানমন্ত্রী লুটিয়ানস দিল্লির ভোল পাল্টে ‘মোদীর দিল্লি’ তৈরি করতে চাইছেন। ঐতিহাসিক ভবন ভেঙে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রার ভিস্টা এলাকায় বহু পুরনো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। শুধু ইন্দিরা গাঁধী সেন্টারেই ২ হাজার গাছ কাটতে হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।