হেনরি ওজা
তাঁর জন্য খুনের আসামী এখন ফুটবলার। তাঁর হাত ধরেই কারাগারে বয়েছে মুক্ত বাতাস। তাঁর হাত ধরেই প্রথম বার অসমের কারাগারে ফুটবল প্রতিযোগিতার আসর বসেছে। সেই নাইজেরিয় বন্দি, ফুটবলার হেনরি ওজা কেলেচির ঘরে ফেরার দিনে মন ভার গোলাঘাট কেন্দ্রীয় কারাগারে।
২০১৬ সালের মার্চে মেয়াদ পার হওয়া ভিসা নিয়ে অসমে ফুটবল খেলতে আসা হেনরি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তাঁকে গোলাঘাটের জেলে পাঠানো হয়।
মন মরা হেনরিকে উৎসাহ দিতে ‘কারেকশনাল সার্ভিস মেডেল’ পাওয়া জেল সুপার দিলীপ শইকিয়া তাঁর হাতে একদিন একটি ফুটবল তুলে দেন। অযত্নে পড়ে থাকা জেল চত্বরের ভলিবল কোর্টে হেনরি একাই প্র্যাকটিস শুরু করেন। ক্রমশ এগিয়ে আসেন খুনের আসামী ভানু সোরেন-সহ হত্যা, ডাকাতি, মাদক সেবনের দায়ে ধৃত আরও অনেক বন্দি। এর পর জেল সুপারের উদ্যোগে পরিত্যক্ত ভলিবল মাঠকেই ৬০ বাই ৩৫ মিটারের ছোট ফুটবল মাঠে বদলে ফেলা হয়। বসানো হয় গোল পোস্ট। শুরু হয় নিয়মিত অনুশীলন। ৫১২ জন কয়েদির অনেকেই আস্তে-আস্তে ফুটবল মাঠে মুক্তির স্বাদ খুঁজে নেন।
জেলখানার দমচাপা পরিবেশে সদা হাস্যময় ২৭ বছরের নাইজেরিয় যুবক অসমীয়া তো শেখেনই, শিখে নেন বিহুর নাচও! তাঁর কথায়-গানে-খেলায় গোলাঘাট কেন্দ্রীয় কারাগারের আবহাওয়াই বদলে যায়। দিলীপবাবু জানান, ‘‘ফুটবলের মধ্যে দিয়ে কয়েদিদের মানসিকতাতেও ইতিবাচক বদল এসেছে।’’ হেনরির কোচিংয়ে ফুটবলার বনে যাওয়া কয়েদিদের নিয়ে একটি টুর্নামেন্টও চালু হয় গোলাঘাট জেলে। কারা দফতর জেলে ফুটবল প্রতিযোগিতার আসর বসায়।
এ বছর মার্চে কারাবাসের মেয়াদ শেষ হয় হেনরির। টাকার অভাবে ফিরতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত বন্দিদের ফুটবল দেখে মুগ্ধ খুমটাইয়ের বিধায়ক মৃণাল শইকিয়া ও গোলাঘাটের কয়েক জন অর্থবান ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। হেনরির ভিসা-টিকিটের ব্যবস্থা করেন তাঁরা। কারাগার ছেড়ে যাওয়ার আগে জেলবন্দিরা তাঁকে ভারাক্রান্ত মনেই ফুলের তোড়ায় বিদায় জানান। আজ দেশের উদ্দেশে যাত্রার আগে হেনরি অসমীয়াতেই বলেন, ‘‘কারাগারে থাকলেও সকলের সঙ্গে মিলে বহাগ বিহু, মাঘ বিহু সব উপভোগ করেছি। গত দেড় বছরের অভিজ্ঞতা আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।’’