কুণাল কামরা। —ফাইল চিত্র।
কৌতুকশিল্পী কুণাল কামরার উপর সাত তাড়াতাড়ি নিষেধাজ্ঞা বসানো নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুললেন অসামরিক বিমান পরিবহণ সংস্থার (ডিজিসিএ) ডিরেক্টর জেনারেল অরুণ কুমার। যে ভাবে কুণালকে নিষিদ্ধ করেছে বিমান সংস্থাগুলি, তাতে বিমান পরিবহণ সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘিত হয়েছে বলে জানালেন তিনি।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অরুণ কুমার বলেন, অপ্রীতিকর আচরণ হাতাহাতি পর্যন্ত না পৌঁছলে, পাইলট ইন-কম্যান্ডের লিখিত অভিযোগ পেলে প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর সাময়িক ৩০ দিনের নিষেধাজ্ঞা বসানো হয়। তার পর অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গড়তে হয়। ৩০ দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে হয়। তার পরই ওই ব্যক্তিকে ‘নো ফ্লায়ার’ তালিকায় রাখা হবে কি না সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কুণালের ক্ষেত্রে তার কোনওটাই মানা হয়নি।তা ছাড়াও এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থও হ
মঙ্গলবার মুম্বই থেকে পুণে আসার পথে ইন্ডিগোর ৬ই৫১৭ বিমানে সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর দিকে বেশ কিছু ‘অপ্রিয়’ প্রশ্ন ছুড়ে দেন কুণাল। পরে নিজে সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতেও আপলোড করেন তিনি। তার পরেই একের পর এক নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া নেমে আসে কুণালের উপর। প্রথমে ইন্ডিগো-র তরফে ছ’মাসের জন্য তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়। পরে গো এয়ার, স্পাইসজেটের ‘নো ফ্লায়ার’ তালিকাতেও ঠাঁই হয় কুণালের।
আরও পড়ুন: বয়কট করল উড়ান সংস্থা, কুণালের প্রশ্ন, ‘আমি কি হাঁটতে পারি মোদীজি’
এয়ার ইন্ডিয়া-র তরফেও কুণালকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। অরুণ কুমারের দাবি, ‘‘সাত তাড়াতাড়ি ছ’মাসের নিষেধাজ্ঞা না চাপিয়ে, অভ্যন্তরীণ কমিটির তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিল বিমান সংস্থাগুলির। বুদ্ধি খাটিয়ে একমাত্র এয়ার ইন্ডিয়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে।ওরা তদন্তে কমিটির রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে।’’
বিমানে অপ্রীতিকর ঘটনা নতুন কিছু নয়। তার জন্য, ২০১৭-র ৮ সেপ্টেম্বর বিমান পরিবহণের নিয়মকানুনে বেশ কিছু সংশোধন ঘটায় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সময় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন পি অশোক গজপতি রাজু। যাত্রী নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু নিয়মকানুনের ঘোষণা করেন তিনি। তাতে বলা হয়, বিমানে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা চাপানো যায়। হাতাহাতি বা ধস্তাধস্তির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বসতে পারে ছ’মাস পর্যন্ত। আর যদি কোনও যাত্রী এমন কোনও আচরণ করেন, যাতে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে তাঁর উপর কমপক্ষে ২ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বসানো যায়।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যার চেষ্টা গুয়াহাটিতে, ঝুলে পড়া মহিলাকে বাঁচাল কলকাতা পুলিশ
কিন্তু কুণাল কামরার যে ভিডিয়ো ঘিরে বিতর্ক, তাতে অর্ণব গোস্বামীর সঙ্গে কোনওরকম কথা কাটাকাটি বা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং একতরফা অর্ণবকে একনাগাড়ে প্রশ্ন করে গিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তো দূর, বরং গোটা সময়টাই কানে ইয়ারফোন গুঁজে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে অর্ণবকে। পাইলটের তরফে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছিল কি না, তা-ও এখনও স্পষ্ট করেনি ইন্ডিগো। তাই কুণালের উপর নিষেধাজ্ঞা বসানো নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। ইন্ডিগো যেখানে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি, সেখানে বাকি বিমান সংস্থাগুলি কেন তদন্ত ছাড়াই সাত তাড়াতাড়ি নিষেধাজ্ঞা বসাতে গেল, উঠছে সেই প্রশ্নও।