ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচলে একটি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ছবি: পিটিআই ।
ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর ভারতের জনজীবন। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যাও। এখনও পর্যন্ত শুধু হিমাচলপ্রদেশেই কমপক্ষে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে গত চার দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। হিমাচলের পাশাপাশি উত্তরাখণ্ডেও অবিরাম বর্ষণের কারণে ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জায়গায় জায়গায় ভূমিধসের কারণে বহু রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিগত কয়েক দিন ধরেই অবিরাম বর্ষণে ভাসছে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ। এখনই এই বৃষ্টি থামবে না বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারও উত্তরাখণ্ডের ধনৌরি, রুদ্রপ্রয়াগ এবং খানপুরে বৃষ্টিপাতের হলুদ সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। এছাড়াও রুরকি, লাকসার এবং ভগবানপুরের আগামী শনি এবং রবিবার বৃষ্টিপাতের কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে দেহরাদূন এবং হরিদ্বারেও।
উত্তরাখণ্ডে ভূমিধসের কারণে বদ্রীনাথ জাতীয় সড়ক-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ। যার প্রভাব পড়েছে চামোলি এবং জোশীমঠের জনজীবনে। চারধামের তীর্থযাত্রীদেরও চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের যমুনোত্রী জাতীয় সড়ক এবং গঙ্গোত্রী জাতীয় সড়কের কাছাকাছি এলাকায় ভূমিধসের কারণে ৩০০ টিরও রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে প়ড়েছে।
ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে ভেসে গিয়েছে হিমাচলপ্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। বিভিন্ন জেলায় রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এখনও পর্যন্ত সে রাজ্যে কমপক্ষে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে হিমাচলের চম্বা, সিমলা, সিরমাউর, কিন্নর এবং অন্যান্য জেলায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক আটকে পড়েছেন। হিমাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু জানিয়েছেন, বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডে আটকে থাকা প্রায় ৫০ হাজার পর্যটককে উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তর ভারতের পঞ্জাব ও হরিয়ানাতে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বুধবার দুই রাজ্য মিলিয়ে নতুন করে ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। যার ফলে পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১। যার মধ্যে শুধু পঞ্জাবেই মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। তবে বৃহস্পতিবার থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকায় দুই রাজ্যের প্রশাসনের তরফে ত্রাণ এবং উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। পঞ্জাবের প্রশাসন সূত্রে খবর, গত তিন দিনে পটিয়ালা, রূপনগর, মোগা, লুধিয়ানা, মোহালি, তরনতারন, জালন্ধর এবং ফতেগড় সাহিব জেলার প্রায় ১৪ হাজার মানুষকে বন্যা কবলিত এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, ব্যাপক বৃষ্টির কারণে অবরুদ্ধ রাজধানী দিল্লির জনজীবনও। দিল্লির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ইতিমধ্যেই যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যমুনার জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দিল্লির বেশ কয়েকটি বাজার এবং আইটিও, কাশমের গেট এবং গীতা কলোনির মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ইতিমধ্যেই জলমগ্ন। যমুনার জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২০৮.৪১ মিটারে পৌঁছেছে। দিল্লির আম আদমি পার্টি (আপ) সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এর আগে যমুনার জলস্তর কখনও এত পরিমাণ বৃদ্ধি পায়নি। আগামী কয়েক দিন যমুনার জলস্তর আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে প্রশাসনের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল যমুনা তীরবর্তী নিচু এলাকায় বসবাসকারীদের ঘরবাড়ি খালি করার আহ্বান দিয়েছেন। সাধারণ মানুষকে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যাওয়ার জন্য যমুনার কাছাকাছিও যেতে বারণ করেছেন তিনি।