গ্রেফতার: অভিযুক্ত কপিল গুজ্জর। শনিবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধান। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর প্রতিবাদস্থলে ফের গুলি চলল। জামিয়া মিলিয়ার পরে এ বার দিল্লিরই শাহিন বাগে।
প্রতিদিনের মতোই আজও শাহিন বাগে সিএএ-বিরোধী জমায়েতে হাজির ছিলেন শ’খানেক মহিলা ও শিশু। বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ আচমকাই গুলির শব্দে রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কালো ট্রাউজার্স, লাল শার্টের উপরে ধূসর ফুল স্লিভ সোয়েটার পরা এক যুবক ব্যারিকেডের কাছে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘হিন্দু রাষ্ট্র জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে শূন্যে দু’বার গুলি চালায়। ওই যুবক যেখানে দাঁড়িয়ে গুলি চালায়, তার অদূরেই ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীন দিল্লি পুলিশ। গুলি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও তাকে ধরে ফেলেন স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, পুলিশকর্মীরা যখন ওই যুবককে একটি গাড়িতে তুলছেন, তখন সে বলছে, ‘‘আমাদের দেশে শুধু হিন্দুদের কথাই চলবে, অন্য কারও কথা চলবে না।’’ দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত যুবক বছর পঁচিশের কপিল গুজ্জর।
এই ঘটনার পরে বিজেপিকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি যে ক্রমাগত ঘৃণার রাজনীতি করছে, এই গুলিচালনা তারই ফল।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘দেখি, পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে এক জন ‘জয় শ্রীরাম’, ‘হিন্দু রাষ্ট্র জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে গুলি চালাল। তার পরে পিস্তলটি জঙ্গলে ফেলে সে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের লোকজন এবং পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।’’ শাহিন বাগের প্রতিবাদীরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশের সামনে এ ভাবে গুলি চালাল কী ভাবে? যেখানে সাংবাদিকদের ধর্নাস্থলের কাছে সহজে পুলিশ যেতে দেয় না, সেখানে এক সশস্ত্র যুবক ধর্নাস্থলের প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যে চলে এল কী ভাবে? এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘ব্যারিকেড পার হয়ে এসে ওই যুবক প্রতিবাদীদের হুমকি দিচ্ছিল। বলছিল, ধর্না প্রত্যাহার করতে হবে। তার পরেই গুলি।’’ ঘটনাস্থল থেকে দু’টি গুলির খোল উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার করে কপিলকে সরিতা বিহার থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পূর্ব দিল্লির দাল্লুপুরা গ্রামে তার বাড়ি। সে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। পুলিশের দাবি, কপিল জেরায় জানিয়েছে, সে কোনও সংগঠন বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত নয়। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ধর্না চালায় সে ক্ষিপ্ত ছিল, তাই ভয় দেখাতে গুলি চালায়। একটি অটো করে সে শাহিন বাগে ধর্নাস্থলের কাছে পৌঁছেছিল। দিল্লি পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ-পূর্ব) চিন্ময় বিসওয়াল বলেন, ‘‘পুলিশ ব্যারিকেডের কাছেই শূন্য গুলি চালিয়েছিল অভিযুক্ত। তাকে আমরা ধরেছি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’
দিল্লিতে আজ এক সভায় শাহিন বাগকে নিশানা করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে এ সব করতে এসেছিল। সম্পত্তি নিলাম করে ক্ষতিপূরণ আদায় করেছি। এখানকার মুখ্যমন্ত্রীর মতো বিরিয়ানি খাওয়াইনি।’’ শাহিন বাগে গুলি চালনা নিয়ে আজ অমিত শাহের উদ্দেশে সেই অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, ‘‘দিনেদুপুরে গুলি চলছে। রাজনীতি থাকবে, ভোট আসবে যাবে। কিন্তু দিল্লিবাসীর স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করুন।’’ কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়বীর শেরগিলের কটাক্ষ, ‘‘শুটার পাল্টেছে কিন্তু ১৯৪৮ (নাথুরাম গডসে) থেকে ২০২০ বন্দুকের ট্রিগার টেপার আদর্শ পাল্টায়নি।’’ বিরোধীরা বলছে, সম্প্রতি দিল্লিতে ভোট প্রচারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিএএ-বিরোধীদের ‘গুলি করার’ হুমকি দেন। তার পরিণতিই আজকের ঘটনা। আজই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ টুইট করেন, শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে সরকার প্রস্তুত। কিন্তু গুলিচালনার ঘটনার পর রবিশঙ্করের বক্তব্য কার্যত চাপা পড়ে গিয়েছে।
এ দিন বাজেট বক্তৃতার ফাঁকেও শাহিন বাগ প্রসঙ্গ উঠে আসে। অর্থমন্ত্রী যখন দেশের নিরাপত্তা নিয়ে সওয়াল করছেন, তখন বিরোধীরা বলে ওঠে, ‘দিল্লির রাস্তায় বন্দুক হাতে ঘুরছে, কোথায় নিরাপত্তা!’ আবার নির্মলা যখন নাগরিকদের ‘আনন্দে থাকার’ কথা বলছেন, তখন বিরোধীদের দাবি, ‘শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের দেখুন। কেউ আনন্দে নেই!’