গণধর্ষণে অভিযুক্ত কুলদীপ সিংহ সেনগার। ফাইল চিত্র।
নাকের বদলে মিলল কিনা নরুণ! উন্নাও গণধর্ষণে অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেনগারের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার এফআইআর দায়ের করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতারের যে প্রশ্ন নেই, সেটা কিন্তু রাজ্যের পুলিশ প্রধান ওপি সিংহের কথা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অভিযুক্ত কুলদীপকে ‘মাননীয় বিধায়কজি’ বলে সম্বোধন করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এফআইআর করা হয়েছে। কিন্তু কী করে আমরা ওঁকে গ্রেফতার করব? এখন তো তদন্তের ভার সিবিআইয়ের উপর।’’
বিরোধীদের মূল নিশানায় কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মাফিয়ারাজে ইতি টানতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে কুলদীপের বেলায় কেন অন্য নিয়ম? তবে কি বিজেপির বিধায়ক বলেই তাঁকে আড়ালের চেষ্টা করছেন যোগী আদিত্যনাথ? প্রশ্নটা বিরোধীদের।
উন্নাওয়ের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত বছরের জুনে দলবল নিয়ে তিনি বছর আঠেরোর মেয়েকে গণধর্ষণ করেছেন। সেই মেয়ের দাবি, কুলদীপকে যাতে গ্রেফতার করা হয়, সে জন্য তিনি পুলিশের কাছেদরবার করেছেন। এমনকী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছেও অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। গত ৮ এপ্রিল পরিবার-পরিজন সহলখনউয়ে আদিত্যনাথের বাড়ির সামনেধর্নার মাঝেই ওই কিশোরী গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এর এক দিন পরেই পুলিশি হেফাজতে রহস্যময়ভাবে মারা যান কিশোরীর বাবা। অভিযোগ, কুলদীপের ভাই অতুলের নেতৃত্বে গুণ্ডাবাহিনী তাঁকে পিটিয়ে খুন করেছে।অতুল গ্রেফতার হলেও কুলদীপ কী করে এখনও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, এর মধ্যেই ২০ গাড়ির কনভয় নিয়ে লখনউয়ের এক পুলিশকর্তার বাড়ি গিয়েছিলেন কুলদীপ সিংহ সেনগার। তবে আত্মসমর্পণের জন্য নয়। তিনি যে পালিয়ে যাননি, সেটা বোঝানোর জন্য।
আরও পড়ুন: ‘বিজেপি সে’ বেটি বাঁচাও, উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে মোদীকে তোপ রাহুলের
আরও পড়ুন: ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রীকে রেহাই দিলেন যোগী
ময়না তদন্তের রিপোর্টে কিশোরীর বাবার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে এখন সিবিআই। আর সেই কিশোরী? পরিবারের গুটি কয়েক সদস্য-সহ তাঁকে রেখে দেওয়া হয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।উন্নাওয়ের একটি হোটেলে।
এ দিন সকালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৩৬৬, ৩৬৩, (অপহরণ), ৫০৬ (অপরাধমূলক কাজকর্ম) ধারায় ও পকসো আইনে কুলদীপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যদিও এফআইআরে কুলদীপের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ডিজিপি-র বক্তব্য, যে হেতু নির্যাতিতা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দেওয়া বয়ানে কুলদীপের নাম উল্লেখ করেনি, তাই এফআইআরেও নাম রাখা হয়নি। বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর কাছে মেয়েটি ও তার পরিবার জানিয়েছে, ভয়ে নাম বলতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট আজ বলেছে, এফআইআর থাকা সত্ত্বেও সেঙ্গারকে গ্রেফতার না করে প্রশাসন প্রমাণ করেছে রাজ্যে আইন -শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।
উন্নাও জেলা হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ধর্ষিতার বাবার মৃত্যুতে তাঁদের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে।