ছবি: সংগৃহীত।
প্রায় সাড়ে তিন দশক পেরিয়ে নিজের পুরনো পরিচয়ে ফিরছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। ফের নাম হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর জায়গায় ফিরছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী তকমা। নতুন শিক্ষা নীতি ঘোষণার অঙ্গ হিসেবে বুধবার এ কথা জানিয়েছে কেন্দ্র।
হঠাৎ নাম বদলের সিদ্ধান্ত কেন?
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর আগে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ভার সামলেছেন। তাঁর দাবি, পৃথিবীর সর্বত্র এই মন্ত্রক ‘শিক্ষা মন্ত্রক’ নামেই পরিচিত। সে দিক থেকে এই সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক। তা ছাড়া, এই নাম বদলের প্রস্তাব এসেছে এই নীতির অন্যতম রূপকার তথা ইসরো-র প্রাক্তন প্রধান কে কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বাধীন বিশেষ কমিটির কাছ থেকেও। যুক্তি, মন্ত্রকের মূল লক্ষ্য যে শিক্ষা, তা যেন স্পষ্ট হয় নামেই। তবে রাজনীতির লোকজন বলছেন, গোড়া থেকেই মানবসম্পদ উন্নয়ন নামটিতে আপত্তি ছিল সঙ্ঘের।
আরও পড়ুন: ‘কর্পোরেট হল শিক্ষা, মুছে গেল গণতন্ত্রও’
১৯৮৫ সালে রাজীব গাঁধীর জমানায় শিক্ষা মন্ত্রকের নাম বদলে রাখা হয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। অনেকে বলেন, ওই সময়ে অর্থনীতির আগল খুলে উদারিকরণের রাস্তায় হাঁটার কথা ভাবনাচিন্তা করছিলেন রাজীব। তার জন্য প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার পাখির চোখও সেটাই হওয়া উচিত মনে করেই নাকি নাম বদলের ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: শিক্ষামন্ত্রীর প্রত্যাবর্তন, নয়া নীতিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষা
কিন্তু সঙ্ঘের একাংশ মনে করে, পড়ুয়াদের এ ভাবে নিছক সম্পদ হিসেবে দেখাটা ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী। শুধু ভবিষ্যৎ কর্মী হিসেবে তাঁদের না-দেখে বরং জোর দেওয়া উচিত সার্বিক শিক্ষায়। তাঁদের এমনও দাবি যে, ঘনিষ্ঠ কিছু উপদেষ্টা ভুল বোঝানোর কারণেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজীব। এ নিয়ে প্রায় ৪০০ জন উপাচার্যের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ এক সংগঠন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তোলার আবেদন জানিয়েছিল সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ ভারতীয় শিক্ষণ মণ্ডলও।
কিন্তু অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক, শিক্ষাবিদ অনিল সদগোপাল, অনীতা রাম পালেরা সম্প্রতি বার বার বলেছেন, শিক্ষার মূল লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে নিছক দক্ষ কর্পোরেট কর্মী তৈরির উপরে সব থেকে বেশি জোর দিতে চাইছে মোদী সরকার! এই কারণে খসড়া শিক্ষানীতির কড়া সমালোচনা করেছেন তাঁরা। বক্তব্য, শুধু রোজগারের রাস্তা খুঁজতে শেখাটা শিক্ষার লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য পড়ুয়াদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁদের সঠিক মানসিক বিকাশ। তাই নাম বদলালেও, মোদী সরকারই আসলে পড়ুয়াদের কর্পোরেট দুনিয়ার সম্পদ করে তুলতে চাইছে বলে কটাক্ষ শিক্ষা জগতের একাংশের।