পর্যালোচনার পরে দেশের বেশ কিছু জেলার গা থেকে ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ তকমা সরিয়ে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের খবর— পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলা তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব জয়দীপ গোবিন্দ এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠিতে কয়েকটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। তার উত্তর পাওয়ার পরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রের এই পর্যালোচনার বিরোধী। তাদের আশঙ্কা, রাজ্যের ৪ জেলার কোনও একটি থেকেও এই তকমা সরিয়ে নিলে সেখান থেকে আধা-সামরিক বাহিনীও সরিয়ে নেওয়া হবে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের আশঙ্কা, এর ফলে মাওবাদী জঙ্গিরা এই এলাকাগুলিতে আবার মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, লাগাতার চেষ্টায় এই জেলাগুলিতে মাওবাদী প্রকোপ কমিয়ে আনা গিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র এমন সিদ্ধান্ত নিলে এত দিনের চেষ্টা জলে যেতে পারে। কেন্দ্রের কাছেও তাঁরা এই বক্তব্য জানাবেন।
বর্তমানে দেশের ১০টি রাজ্যের মোট ১০৬টি জেলা ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ বলে চিহ্নিত। তার মধ্যে ৭টি রাজ্যের ৩৫টি জেলা ‘অতি প্রভাবিত’ হিসাবে চিহ্নিত। মাওবাদী তৎপরতার বিষয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট চেয়েছিল কেন্দ্র। সেই রিপোর্ট পেয়ে মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, দেশের অন্তত ৩০টি জেলায় এখন আর মাওবাদী প্রভাব নেই। তবে কোন কোন জেলা ওই তালিকায় রয়েছে তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না তাঁরা। রাজ্যগুলির জবাব পাওয়ার পরেই নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হিসেবে, দেশে এখন সব চেয়ে বেশি মাওবাদী প্রভাবিত জেলা রয়েছে বিহারে। বিহারের ৩৯টি জেলার মধ্যে ২২টিই ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ বলে চিহ্নিত। এর পরেই রয়েছে ঝাড়খণ্ডের ২১টি, ওড়িশার ১৯টি, ছত্তীসগঢ়ের ১৬টি, অন্ধ্রপ্রদেশের ৮টি, তেলঙ্গানার ৮টি, মহারাষ্ট্রের ৪টি, পশ্চিমবঙ্গের ৪টি, কর্নাটকের ২টি এবং কেরল ও মধ্যপ্রদেশের ১টি করে জেলা। মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, নিয়মিত অভিযান চালানোয় মাওবাদীদের শক্তি অনেকটাই কমেছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এক সময়ে দেশ জুড়ে সাড়ে আট হাজার সশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে বেশ কয়েকটি বাহিনী তৈরি করতে পেরেছিল মাওবাদীরা। জন সমর্থনও জুটিয়েছিল কিছুটা। গত তিন বছরে তাতে ভাটার টান।
মন্ত্রকের কর্তাদের ইঙ্গিত, এ বারে মাওবাদী প্রভাবিত জেলার তালিকা থেকে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি বাদ পড়ার সম্ভবনা। প্রতি বছর উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ জেলা পিছু অতিরিক্ত ৩০ কোটি টাকা দেয় কেন্দ্র। তকমা চলে গেলে সেই বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁদের দাবি, সে কারণেই রাজ্যগুলি মন্ত্রকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিজেদের যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করছে। বিহার সরকারের এক কর্তার কথায়, ‘‘মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় বরাদ্দ কমে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। নতুন করে সেখানে মাওবাদী কাজকর্ম বাড়তে পারে।’’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, মাওবাদী এলাকায় উন্নয়নে সাফল্যের শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তালিকার শেষে বিহার। নতুন ১৮টি থানা তৈরির জন্য পশ্চিমবঙ্গকে ২৮ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ১৭টি থানা তৈরির কাজ শেষ। একটির কাজ চলেছে। পাশপাশি, বিহারকে নতুন ৮৫টি থানা তৈরি করতে ১২৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ৪১টি থানার কাজে হাতই দিতে পারেনি বিহার সরকার। একই অবস্থা ছত্তীসগঢ় এবং ওড়িশাতেও। দুই রাজ্যে ৭৫টি এবং ৭০টি নতুন থানা তৈরির কথা থাকলেও বেশির ভাগই অসম্পূর্ণ।