নাহিদ আফ্রিন।—নিজস্ব চিত্র।
ধর্মীয় মৌলবাদের কাছে মাথা নোয়ালেন না অসমিয়া গায়িকা নাহিদ আফ্রিন। কট্টরপন্থীদের ফতোয়া উপেক্ষা করে জানিয়ে দিলেন, তাঁর সঙ্গীতের সফর চলবে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে ফতোয়ার কথা শুনে ভেতর থেকে একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু, গান না ছাড়ার জন্য অনেক মুসলিম গায়কই আমাকে উত্সাহ দিয়েছেন। এবং আমি গান ছাড়ছি না।’’
ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে। নগাঁওয়ের হোজাইয়ের উদালিতে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে গান গাওয়ার কথা ছিল নাহিদের। সর্বভারতীয় একটি রিয়্যালিটি শো থেকে উঠে আসা নাহিদ এই মুহূর্তে অসমের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী। উদালির সোনাইবিবি কলেজের মাঠে এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, অনুষ্ঠানের আগেই ওই এলাকায় একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। সেখানে গানবাজনাকে শরিয়ত্ বিরোধী বলে ওই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। এর পরেই বিতর্ক শুরু হয়।
আরও খবর
আউট হয়েই বোলারকে এ রকম মার! দেখুন ভিডিও
কোনও সংগঠনের নাম না থাকলেও ওই লিফলেটে ৪২ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, নাচ-গান, নাটক, থিয়েটার, জাদু ইত্যাদি শরিয়ত বিরোধী। এর আগে অনেক বাধা দেওয়া সত্ত্বেও এক বার সোনাইবিবি কলেজের মাঠে জাদুর আসন বসানো হয়েছিল। শরিয়ত বিরোধী সেই কাজের জন্য এলাকায় বিরাট প্রভাব পড়ে। ওই ‘মুরুব্বি’রা ভেবেছিলেন এমন কাজ আর হবে না। কিন্তু, সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে ফের শরিয়ত বিরোধী একটা কাজ হতে চলেছে বলে তাঁদের মনে হয়েছে। তাই, এই সব কাজকর্ম দেখে চুপ করে বসে থাকাটা অপরাধের সামিল।
তা হলে কী করা উচিত? সে নিদানও দেওয়া হয়েছে ওই লিফলেটে।
বলা হয়েছে, নিজেদের এবং পরবর্তী প্রজন্মকে এই উদ্যোগ থেকে সরিয়ে না রাখলে অনাগত ভবিষ্যত্ খুব খারাপ। ঈশ্বর এতে ক্ষুব্ধ হবেন। এই এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ইদগা রয়েছে। সেখানে এমন সঙ্গীতের আসর বসালে তা শরিয়তকে অপমান করার সামিল। কাজেই এই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হোক।
এই সেই লিফলেট
এর পরেই গোটা অসম সরব হয়ে ওঠে। নাহিদ আফ্রিনের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল বলেন, ‘‘নাহিদ আফ্রিনের মতো শিল্পীর অনুষ্ঠানে ফতোয়া জারি করাটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি নিজে নাহিদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁর বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ প্রথমে ভেঙে পড়লেও পরে গোটা ঘটনার নিন্দা করেন নাহিদ। তাঁর কথায়, ‘‘আমার গানের গলা ঈশ্বরপ্রদত্ত। তা সঠিক ভাবে কাজে লাগানো উচিত বলে বিশ্বাস করি। গান ছেড়ে দিয়ে ঈশ্বরকে অবজ্ঞা করতে পারব না।’’
ওই লিফলেটের অন্যতম স্বাক্ষরকারী রাজ্য জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মৌলানা আবদুর রশিদ কাশিমি বলেন, "আমরা কোনও ফতোয়া দিইনি। যা লিখেছি সেটা আবেদন। এই ধরণের অনুষ্ঠান শরিয়ৎ বিরোধী। রাত পর্যন্ত সেখানে পর্দা ছাড়া মহিলারা থাকবেন। তা শরিয়ৎ মান্যতা দেয় না। এখন অনুষ্ঠান বন্ধ করা বা না করা উদ্যোক্তাদের ব্যাপার।"
আরও খবর
‘ছোঁক ছোঁক করছিল লোকটা, বাড়ি ফিরে দেখি জিন্সে বীর্যের দাগ’
তবে, নাহিদ আফ্রিনের অনুষ্ঠানে ফতোয়া জারি করায় অধিকাংশ অসমবাসী ক্ষুব্ধ। রাজনৈতিক কর্মী মেহদি আলম বোরার মতে, ইসলামিক দর্শনে সঙ্গীতের বিরোধিতা করা হয়নি। সুফি সঙ্গীত তো ইসলামি দর্শনের উপর ভিত্তি করেই হয়েছে। তাঁর কথায়: ‘‘ইসলাম এত ক্ষুদ্র ব্যাপার নয় যে, এ ধরনের কাজকর্মকে বারণ করবে। যারা ফতোয়া জারি করেছেন, তাঁদের কোনও সামাজিক ভিত্তি নেই। ওঁরা ইসলামের দর্শনটাই ভাল করে জানেন না। অসমের মুসলিম সমাজ অনেক প্রগতিশীল। সামগ্রিক ভাবে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।’’