দুই ভাই ভিত্তল ও নন্দ।
বড় ছেলে ভিত্তলের বয়স নয়। আর তার ভাই নন্দ সবে পাঁচ। দুই ছেলেকে নিয়ে শনিবার কিছু ক্ষণের জন্য বেরিয়েছিলেন তাদের অধ্যাপক বাবা রাঘবেন্দ্র গুরুপ্রসাদ। সে দিনই সন্ধ্যায় রেল লাইনের ধার থেকে পাওয়া যায় গুরুপ্রসাদের ছিন্নভিন্ন দেহ। আর তাঁর মোবাইলের সূত্র ধরে দু’দিন পর মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল ভিত্তল ও নন্দর নিথর দেহ।
গুরুপ্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী সুহাসিনীর বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছে গত বছরেই। তার পর থেকে দুই ছেলে থাকত মায়ের কাছে। সপ্তাহে মোটে এক বার ছেলেদের দেখার অনুমতি পেয়েছিলেন বাবা। শনিবার সকাল ন’টা নাগাদ মালকজগিরির আনন্দবাগে সুহাসিনীর বাড়িতে এসে ভিত্তল ও নন্দকে কয়েক ঘণ্টার জন্য নিয়ে যান গুরুপ্রসাদ। তাঁর স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন, দুপুরে ছেলেদের নিয়ে ফেরার কথা থাকলেও একাই আসেন তাঁর স্বামী। বিচ্ছেদ ভুলে স্ত্রীকে তাঁর কাছে ফিরে আসার কথাও বলেছিলেন। যদিও সুহাসিনী রাজি না হওয়ায় ফের বাড়ি ছাড়েন রাঘবেন্দ্র গুরুপ্রসাদ।
কিন্তু সন্ধে পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দুই ছেলে বাড়ি না ফেরায় স্বামীর মোবাইলে ফোন করেন সুহাসিনী। গুরুপ্রসাদের ফোন ধরেন রেল পুলিশের এক কর্মী।
তিনিই জানান, জেমস স্ট্রিট স্টেশনের কাছে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই অধ্যাপক। আলওয়ালে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সুইসাইড নোট খুঁজে পায় পুলিশ। তাতে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিবাহ-বিচ্ছেদের কথাই লিখেছেন গুরুপ্রসাদ। অধ্যাপকের হদিশ মিললেও ভিত্তল আর নন্দর কিন্তু খোঁজ মেলেনি সে দিন।
মালকজগিরির ইনস্পেক্টর জি শেখর গৌড় জানিয়েছেন, অধ্যাপকের মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটি মেসেজ চোখে পড়ে তদন্তকারীদের। মেসেজটি লিখলেও সেটি কাউকে পাঠাননি তিনি। তাতে লেখা, সন্তানদের খুন করে মেডচাল এলাকায় তাঁরই কেনা একটি জমির তলায় পুঁতে দিয়েছেন বাবা।
সোমবার বিকেলে মাটি খুঁড়ে দুই ভাইয়ের বিকৃত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কী ভাবে তাদের খুন করা হয়েছে তা অবশ্য জানা যাবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই।